আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফের বিজেপি শাসিত ওড়িশায় নারী নির্যাতনের ঘটনা ফাঁস। এবার গণধর্ষণের শিকার ১৭ বছরের এক কিশোরী। যে ঘটনায় এখনও পর্যন্ত দু'জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে ওড়িশার ভুবনেশ্বরে। রবিবার পুলিশ জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার শহিদ নগর থানার অন্তর্গত এলাকায় গণধর্ষণের শিকার হয় ১৭ বছরের এক কিশোরী। শুক্রবার অভিযোগ দায়ের করা হয়। গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে একজন কিশোরীর পূর্ব পরিচিত ছিলেন।
নির্যাতিতা কিশোরী জানিয়েছে, চাকরির টোপ দিয়ে বৃহস্পতিবার ওই যুবক তাঁর ভাড়া বাড়িতে ডেকেছিলেন। সেখানে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই হেনস্থা করতে শুরু করেন দুই যুবক। সেই ভাড়া বাড়িতেই গণধর্ষণ করেন তাঁরা। চিৎকার, চেঁচামেচি করেও রেহাই পায়নি কিশোরী।
শুক্রবার পরিবারে ঘটনাটি জানায় কিশোরী। সেদিন থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। শনিবার দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দু'জনের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ও পকসো ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
চলতি মাসের শুরুতেই ওড়িশার সুন্দরগড় জেলায় স্নাতকের এক ছাত্রী গায়ে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ৯০ শতাংশ অগ্নিদগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। রাউরকেলার হাসপাতালে ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। ছাত্রীকে লাগাতার হেনস্থা করার অভিযোগে এক কলেজ পড়ুয়াকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
প্রসঙ্গত, ১১ আগস্ট, ১৩ বছরের এক কিশোরীর গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। সেটিও ওড়িশার ঘটনা। বালেশ্বর, বালাঙ্গা ও কেন্দ্রপাড়ার পর এবারের ওড়িশার বারগড় জেলা। ৩০ দিনের মাথায় একই ঘটনা, চারবার। ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশ জানিয়েছিল, মামার বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিল অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। গ্রামের ফুটবল মাঠে অচৈতন্য অবস্থায় কিশোরীর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার শরীরে একাধিক জায়গায় পোড়া দাগ ছিল। দগ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বুরলার বীর সুরেন্দ্র সাঁই ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন তার মৃত্যু হয়।
গত কয়েক মাসেই ওড়িশার একাধিক কলেজ পড়ুয়া গায়ে আগুন জ্বালিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। সম্প্রতি কেন্দ্রপাড়ায় তৃতীয়বার এই ঘটনা ঘটেছে। এক কলেজ ছাত্রী অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। তিনিও গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হন। পরিবারের তরফে ওই ছাত্রীর প্রেমিকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। মানসিক নির্যাতন ও হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রীর প্রেমিকের বিরুদ্ধে। বারবার তাঁকে ব্ল্যাকমেল করা হত বলেও অভিযোগ জানিয়েছে পরিবার।
এর আগে গত ১২ জুলাই ওড়িশার বালেশ্বরের ফকির মোহন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও এক ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ফকির মোহন কলেজের বি.এড-এর ছাত্রী ছিলেন এক তরুণী। ওই কলেজের হেড অব দ্যা ডিপার্টমেন্ট সমীর কুমার সাহুর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। পয়লা জুলাই কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান তরুণী। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, সাতদিনের মধ্যে তদন্ত করে, উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। কিন্তু সাতদিন পার করেও কলেজ কর্তৃপক্ষ অধ্যাপকের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেননি। বরং বিষয়টি নিয়ে কারও কোনও মাথা ব্যথা ছিল না। অবশেষে কলেজের মধ্যে প্রিন্সিপালের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান তরুণী ও তাঁর বন্ধুরা।
কলেজের গেটের সামনে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগের ভিত্তিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন পড়ুয়ারা। দলে ছিলেন তরুণীও। হঠাৎ সকলের মাঝখান থেকে উঠে সোজা কলেজের করিডোরে চলে যান। সেখানে গিয়েই গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেন। তাঁর শরীরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের লেলিহান শিখা দেখেই ছুটে আসেন সহপাঠীরা। তাঁরাও আগুন নেভাতে তোড়জোড় শুরু করেন। কয়েক মিনিট পর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তরুণীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। দুই দিন পরেই তরুণীর মৃত্যু হয়।
এরপর গত ১৯ জুলাই ওড়িশার পুরী জেলার বালাঙ্গা থানার অন্তর্গত এলাকায় আরও একটি এমন ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ঘটনার দিন তিনজন বাইক আরোহী প্রথমে এক তরুণীকে অপহরণ করেন। পরে তাঁরা মেয়েটিকে ভরগবী নদীর তীরে নিয়ে যান। বাইবর গ্রাম সংলগ্ন একটি নির্জন জায়গায় তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানেই তরুণীর গায়ে প্রথমে একটি দাহ্য পদার্থ ঢালেন৷ এরপর তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ওই তরুণীর।
