আজকাল ওয়েবডেস্ক: সংখ্যা না গুণমান—এই প্রশ্নের মুখোমুখি মানুষ প্রতিদিনই হয়। একটি অত্যন্ত দক্ষ সহকর্মী নাকি গড়পড়তা অনেক মানুষের দল—কোনটি বেশি কার্যকর? এই প্রশ্নের গভীরে লুকিয়ে আছে প্রকৃতির এক বাস্তব সমস্যা। নতুন এক বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, পিঁপড়েরা লক্ষ লক্ষ বছর ধরেই এই একই সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়েছে।


গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক পিঁপড়ে প্রজাতি কম সংখ্যক শক্তিশালী কর্মীর বদলে বিপুল সংখ্যক তুলনামূলকভাবে দুর্বল কর্মী নিয়ে বিশাল কলোনি গড়ে তুলে সাফল্য অর্জন করেছে। এই গবেষণা পিঁপড়েদের সমাজে নিরাপত্তা ও জনসংখ্যার মধ্যে ভারসাম্য কীভাবে গড়ে উঠেছে, তা ব্যাখ্যা করে। সেই ভারসাম্যই পিঁপড়েদের জটিল সামাজিক কাঠামো গড়ে তুলতে এবং সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করেছে।


এই গবেষণার মূল বিষয় ছিল ‘কোয়ান্টিটি বনাম কোয়ালিটি’-র সমঝোতা। পিঁপড়েদের ক্ষেত্রে ‘কোয়ালিটি’ বলতে বোঝানো হয়েছে দেহ কতটা শক্তিশালী ও সুরক্ষিত, আর ‘কোয়ান্টিটি’ বলতে বোঝানো হয়েছে একটি কলোনি কতজন কর্মী তৈরি করতে পারে।


পিঁপড়ের শরীরে একটি সুরক্ষার বাইরের স্তর থাকে, যাকে বলা হয় কাটিকল। এই স্তরটি বর্মের মতো কাজ করে—শিকারি, শুষ্কতা ও রোগ থেকে পিঁপড়াকে রক্ষা করে এবং পেশির ভরও ধরে রাখে। কিন্তু মোটা কাটিকল তৈরি করতে প্রচুর পুষ্টি লাগে। বিশেষ করে নাইট্রোজেন ও খনিজ উপাদান দরকার হয়, যা প্রকৃতিতে প্রায়ই সীমিত।


এর ফল হল যদি বেশি পুষ্টি দেহের বর্ম তৈরিতে যায়, তাহলে কম সংখ্যক কর্মী তৈরি করা সম্ভব হয়। আবার বর্ম পাতলা হলে, বেশি সংখ্যক কর্মী বেঁচে থাকতে পারে।


গবেষকরা জানতে চেয়েছিলেন, কম সুরক্ষা দিয়ে কি পিঁপড়েরা বড় ও সফল কলোনি গড়ে তুলতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তারা ৫০০টিরও বেশি পিঁপড়ের প্রজাতি নিয়ে গবেষণা করেন। আধুনিক থ্রি-ডি এক্স-রে স্ক্যানের সাহায্যে তারা পিঁপড়েদের দেহের আকার ও কাটিকলের পরিমাণ মাপেন।


ফলাফল ছিল চোখে পড়ার মতো। কিছু প্রজাতিতে কাটিকল দেহের মাত্র ৬ শতাংশ, আবার কোথাও তা ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত। এই তথ্যগুলো বিবর্তনমূলক মডেলে বসিয়ে দেখা যায়, যেসব প্রজাতির কাটিকল পাতলা, তারা প্রায়শই অনেক বড় কলোনি তৈরি করে। পিঁপড়েদের বিবর্তনের নানা শাখায় এই ধারা বারবার দেখা গেছে।


গবেষণার প্রধান লেখক আর্থার ম্যাটের মতে, বড় কলোনিতে পিঁপড়েরা ব্যক্তিগত শক্তির ওপর নির্ভর করে না। দলবদ্ধভাবে খাদ্য সংগ্রহ, যৌথভাবে রক্ষা এবং শ্রমবিভাগ ব্যক্তিগত ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেয়। 


এই ধারা বহুকোষী জীবনের বিবর্তনের সঙ্গেও মিলে যায়—যেখানে একটি কোষ তুলনামূলকভাবে সরল হলেও সম্মিলিতভাবে তারা অসাধারণ জটিলতা ও ক্ষমতা অর্জন করতে পারে।