মোহনবাগান - ১ (দিমিত্রি)
ওড়িশা এফসি - ০
সম্পূর্ণা চক্রবর্তী: ইংরেজিতে 'চ্যাম্পিয়ন্স লাক' বলে একটি কথা আছে। এদিন দিমিত্রি পেত্রাতোসের ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য। রবিবাসরীয় রাতে এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। দলকে 'সঞ্জীবনী টোটকা' দিলেন দিমি। ম্যাচের বয়স তখন ৯০+৩। হতাশ গ্যালারি। ঠিক সেই সময় মনবীরের পাস থেকে টার্ন করে বাঁ পায়ের শটে গোল। যুবভারতীতে ওড়িশা এফসিকে ১-০ গোলে হারিয়ে লিগ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান। পরপর দু'বার। তাও আবার ঘরের মাঠে। আগের বছর কলকাতায় লিগের শেষ ম্যাচে মুম্বই সিটি এফসিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আন্তনিয় হাবাসের বাগান। এদিন ওড়িশাকে হারিয়ে দু'ম্যাচ বাকি থাকতে চ্যাম্পিয়ন মোলিনার দল। আইএসএলের প্রথম দল হিসেবে পরপর দু'বার লিগ শিল্ড জয়। খেতাবি ম্যাচে গোল করা অভ্যাসে পরিণত করেছেন দিমি। গোটা মরশুমের ব্যর্থতা যেন একদিনেই ঢেকে দিলেন। রবিবাসরীয় রাতে ম্যাচের ৯০+৩ মিনিটে এল মাহেন্দ্রক্ষণ। ৭৮ মিনিটে পরিবর্ত ফুটবলার হিসেবে নেমে বাজিমাত অস্ট্রেলিয়ান তারকার। দিমিত্রির গোলের পর উচ্ছ্বাসে মাঠে ঢুকে পড়েন হোসে মোলিনা সহ রিজার্ভ দলের ফুটবলাররা। নাচের ভূমিকায় মাঠে প্রবেশ করেন স্প্যানিশ কোচ। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজামাত্র শুরু সেলিব্রেশন। মোলিনাকে কাঁধে তুলে নেয় ফুটবলাররা। সাপোর্ট স্টাফ সহ গোটা দল তখন মাঠে। গমগমে পরিবেশ। চলছে বাগানের থিম সং, 'আমাদের সূর্যের রং সবুজ মেরুন..'। ৫৭ হাজারের গ্যালারি উৎসবের মেজাজে। ফাটল বাজি। মুহূর্তের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন্স জার্সিতে দেখা যায কর্তা, সাপোর্ট স্টাফ সহ গোটা দলকে। ২২ ম্যাচে ৫২ পয়েন্ট নিয়ে লিগ শিল্ড জিতল মোহনবাগান।
এদিন ৪-২-৩-১ ফরমেশনে দল সাজান মোলিনা। সামনে একা ম্যাকলারেন। তার একটু পেছন থেকে গ্রেগ স্টুয়ার্ট। প্রথমার্ধে ওড়িশার পায়ের জঙ্গলে আটকে যায় মোহনবাগান। ম্যাকলারেন বল পেলেই চারদিক থেকে ছেকে ধরছিল বিপক্ষের ডিফেন্ডাররা। আগের দিনই সাংবাদিক সম্মেলনে মোলিনা বলেছিলেন, কয়েকটা দল পাঁচ-ছয়জন মিলে ডিফেন্ড করছে। এদিন তাই হয়। প্রথমদিকে বল ধরে খেলার চেষ্টা করছিল ওড়িশা। কিন্তু গোল লক্ষ্য করে কোনও শট নেই। বরং গোল করার সুযোগ ছিল বাগানের। ম্যাচের ২৮ মিনিটে প্রথম পজিটিভ সুযোগ। বক্সের মধ্যে ম্যাকলারেনকে ফাউল করেন মুর্তাদা ফল। কিন্তু পেনাল্টি দেয়নি রেফারি। প্রথমার্ধে সবুজ মেরুনের যাবতীয় সুযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ম্যাকলারেন। ৩১ মিনিটে অস্ট্রেলিয়ান বিশ্বকাপারের শট বাঁচান অমরিন্দর। প্রথমার্ধে গোলের নীচে অনবদ্য ছিলেন ওড়িশার গোলকিপার। দুটো নিশ্চিত গোল বাঁচান। বিরতির ঠিক আগে জোড়া সেভ পাঞ্জাবের কিপারের। স্টুয়ার্টের শট বাঁচান অমরিন্দর। ফিরতি বলে ম্যাকলারেনের শটও বাঁচান। এদিন কিছুটা অফকালর লিস্টন কোলাসো। বাগানের অধিকাংশ আক্রমণই ছিল ডানপ্রান্ত কেন্দ্রিক। চোটের আশঙ্কায় একটা সময় মনবীরের খেলা নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু এদিন যথেষ্ট ভাল খেলেন। ম্যাচের ৪২ মিনিটে ম্যাকলারেনের জন্য ঠিকানা লেখা ক্রস বাড়ান মনবীর। কিন্তু অজি তারকা বল পাওয়ার আগেই ক্লিয়ার করে দেন থইবা সিং।
বিরতির পরও আক্রমণ বেশি ছিল বাগানের। একাধিক সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু সবই মিস। বাগানের সবচেয়ে সহজ সুযোগ ৫৯ মিনিটে। স্টুয়ার্টের পাস থেকে সহজতম সুযোগ মিস মনবীরের। দ্বিতীয়ার্ধে সুযোগ নষ্টের বহর না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। মিসের তালিকায় কে নাম লেখায়নি! ম্যাকলারেন, স্টুয়ার্ট, মনবীরের মিসের পর মিস। পরিবর্ত হিসেবে নেমে এই তালিকায় নাম লেখান দিমিত্রি পেত্রাতোস। ম্যাচের ৮৪ মিনিটে ম্যাকলারেনকে ফাউল করায় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন মুর্তাদা ফল। যেভাবে আক্রমণের ঝড় তোলে বাগান, রোখা সম্ভব ছিল না ওড়িশার। শেষমেষ ঘরের মাঠে ইতিহাস রচনা করল মোহনবাগান।
