সম্পূর্ণা চক্রবর্তী
মোহনবাগান - ২ (ম্যাকলারেন, দিমিত্রি-পেনাল্টি)
ইস্টবেঙ্গল - ০
ম্যাচের বয়স তখন ৮৯ মিনিট। নিভে গিয়েছে মশাল। গ্যালারিতে জ্বলছে সবুজ মেরুন ফুলঝুরি। ডার্বি জয়ে আগাম দেওয়ালি যুবভারতীতে। স্টেডিয়ামের রং সবুজ মেরুন। মিনি ডার্বির পর ডার্বি। আরও একটি দুরন্ত জয় মোহনবাগানের। শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ইস্টবেঙ্গলকে ২-০ গোলে হারাল সবুজ মেরুন। জোড়া গোল জেমি ম্যাকলারেন এবং দিমিত্রি পেত্রাতোসের। ৫ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের দু'নম্বরে উঠে এল মোহনবাগান। মোট নয়ের মধ্যে আইএসএল ডার্বিতে আট জয়। একটি ড্র।
অন্যদিকে আইএসএলে এই প্রথম টানা পাঁচ ম্যাচে হার ইস্টবেঙ্গলের। এর আগে ২০২২-২৩ মরশুমে টানা চার ম্যাচে হেরেছিল। এদিন গোল সংখ্যা আরও বাড়তে পারত। পুরোপুরি একপেশে ম্যাচ। পাঁচ গোলে হারের লজ্জা বাঁচাল ইস্টবেঙ্গল। গোটা নব্বই মিনিটে একটি মাত্র সুযোগ ইস্টবেঙ্গলের। মাঝমাঠ বলে কিছুই নেই। উইং প্লেও তথৈবচ। বয়সের ভারে পুরোনো ক্লেইটনের এক ঝলকও দেখতে পাওয়া যায়নি। মাদি তালাল আইএসএলের শুরু থেকেই ছন্দে নেই। দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হল নন্দকুমারকে। কোচ বদলে যদি রাতারাতি ভাগ্য ফিরে যেত, তাহলে ফুটবল অভিধান বলে আর কিছু থাকত না। লাল হলুদ জার্সিতে অস্কার ব্রুজোর অভিষেক সুখকর হল না। তবে লজ্জার হাত থেকে বাঁচলেন ইস্টবেঙ্গলের নবাগত কোচ। তার জন্য দায়ী ম্যাকলারেন, লিস্টন, মনবীর। ভুরিভুরি সুযোগ হাতছাড়া। নয়তো এদিন স্কোরলাইন কত হত বলা মুশকিল। অভিষেক ডার্বিতে গোল ম্যাকলারেনের, জয় হোসে মোলিনার। গোল পেলেন দিমিত্রিও। বড় ম্যাচে গোল করা অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন অজি তারকা।
দু’ম্যাচে জোড়া গোল। দুইয়ে দুই জেমি ম্যাকলারেনের। গোল চিনতে ভুল নেই অস্ট্রেলিয়ান বিশ্বকাপারের। মহমেডানের পর ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধেও জ্বলে উঠল তাঁর বাঁ পা। বিরতির আগে মোহনবাগানকে এগিয়ে দিলেন। ম্যাচের ৪১ মিনিটে মনবীরের নিখুঁত মাইনাস। প্রভসুখন গিলকে পরাস্ত করে গড়ানো শটে গোল ম্যাকলারেনের। তবে বিরতির আগে গোল সংখ্যা আরও বাড়তে পারত। মহমেডান ম্যাচের প্রথম একাদশ ধরে রাখেন হোসে মোলিনা। চলতি আইএসএলে সেটাই ছিল সবুজ মেরুনের সেরা ম্যাচ। তাই উইনিং কম্বিনেশন ধরে রাখেন বাগান কোচ। দিমিত্রি পেত্রাতোস, জেসন কামিন্সকে বেঞ্চে রাখেন। ফরমেশনও একই। ৪-২-৩-১। অন্যদিকে ইস্টবেঙ্গল দলে ছিল জোড়া চমক। প্রথম একাদশে দুই তরুণ তুর্কি প্রভাত লাকরা এবং ডেভিড লালনসাঙ্গাকে রাখা হয়। প্রথমজন অভিষেক ডার্বি হিসেবে কাজ চালিয়ে দিলেও, ডাহা ব্যর্থ ডেভিড। লাল হলুদ জার্সিতে এখনও নজর কাড়তে ব্যর্থ গত কলকাতা লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা।
ভোর রাতে কলকাতায় পা রেখেই ডাগআউটে বসেন অস্কার ব্রুজো। পুরো নব্বই মিনিট কোচের সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন লাল হলুদের নবাগত কোচ।
আন্ডারডগ হিসেবে নামলেও শুরুটা খারাপ করেনি ইস্টবেঙ্গল। প্রথমদিকে লড়াই সেয়ানে সেয়ানে ছিল। মাঝমাঠ দখলের লড়াইয়ে নামে ইস্ট-মোহন। কিন্তু আধিপত্য অনেক বেশি ছিল বাগানের। অনবদ্য গ্রেগ স্টুয়ার্টের। পুরো ম্যাচ পরিচালনা করলেন স্কটিশ তারকা। ডুরান্ড কাপে ভাল খেললেও, আইএসএলে এখনও পর্যন্ত ফিকে মাদি তালাল। প্রথমার্ধে একাধিক সুযোগ পায় বাগান। প্রথম চান্স ম্যাচের ২ মিনিটে। মনবীরের পাসে পা ছোঁয়ালেই গোল। কিন্তু পৌঁছতে পারেনি ম্যাকলারেন। ১৮ মিনিটে ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগ মিস অজি বিশ্বকাপারের। স্টুয়ার্টের পাস ফাঁকা গোলের সামনে পেয়েও ইস্টবেঙ্গল কিপারের গায়ে মারেন ম্যাকলারেন। তার এক মিনিট পরই লিস্টনের কর্নার থেকে মনবীরের হেড অফসাইডের জন্য বাতিল হয়ে যায়। ম্যাচের ২৫ মিনিটে আবার মিস। স্টুয়ার্টের কর্নার থেকে মনবীরের হেডে গোললাইন সেভ হেক্টর ইউস্তের। প্রথম ৪৫ মিনিট দাপট অনেক বেশি ছিল বাগানের। প্রথমার্ধে মাত্র দুটো সুযোগ ইস্টবেঙ্গলের। তাও হাফ চান্স। ম্যাচের ১২ মিনিটে হেড করে বল নামিয়ে ক্লেইটনের ডান পায়ের শট বাঁচান বিশাল কাইত। ম্যাচের ২৬ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে মাদি তালালের মিস।
বিরতির পর পুরোপুরি একপেশে ম্যাচ। লাল হলুদের মাঝমাঠ বলে কিছুই ছিল না। দ্বিতীয়ার্ধে কোনও পজিটিভ আক্রমণ নেই ইস্টবেঙ্গলের। বরং মনবীর, লিস্টনরা একাধিক সুযোগ নষ্ট করে। নয়তো গোলের ব্যবধান আরও বাড়তে পারত। ম্যাচের ৬০ মিনিটে সরাসরি গিলের হাতে মারেন লিস্টন। ৮৪ মিনিট স্টুয়ার্টকে ফাউল করেন আনোয়ার। ন্যায্য পেনাল্টি। কিন্তু বাগান ফুটবলারদের আবেদনে কর্ণপাত করেনি রেফারি। অবশ্য তার ৪ মিনিট পরই প্রায়শ্চিত করেন তেজাস। ৮৮ মিনিটে পরিবর্ত দিমিত্রিকে ফাউল করেন প্রভসুখন। পেনাল্টি দেন রেফারি। স্পট কিক থেকে গোল করেন দিমিত্রি।
ছবি: অভিষেক চক্রবর্তী
