আজকাল ওয়েবডেস্ক: কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে লিওনেল মেসির অনুষ্ঠান চলাকালীন সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করলেন সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের (AIFF) সভাপতি কল্যাণ চৌবে।

ঘটনার একদিন পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি সতর্ক করেন, এই ঘটনার প্রভাব আগামী কয়েক দশক ধরে কলকাতার ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

কল্যাণ চৌবে বলেন, এই ধরনের অনুষ্ঠানে যে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা রাজ্যের ক্রীড়া প্রশাসনের প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতির প্রতিফলন।

তিনি জানান, যে শহরকে ভারতীয় ফুটবলের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে দেখা হয় সেখানে এই ধরনের ঘটনা ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’ সংবাদমাধ্যম এএনআইয়ে শেয়ার করা এক ভিডিও বার্তায় চৌবে বলেন, ‘মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বিশ্বের সেরা ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম। তাঁদের কোটি কোটি ভক্ত রয়েছে। ফুটবল প্রায় ২১০টি দেশে খেলা হয়। এমন কোনও ঘটনা ঘটলে তা আন্তর্জাতিক স্তরে নজরে পড়ে।’

ফেডারেশন সভাপতি মনে করিয়ে দেন, অতীতে কলকাতা বহু কিংবদন্তি ফুটবলার ও আন্তর্জাতিক মানের অনুষ্ঠান সফলভাবে আয়োজন করেছে।

পেলে, দিয়েগো মারাদোনা, লেভ ইয়াশিন, অলিভার কান ও লোথার ম্যাথাউসের মতো তারকারা কলকাতায় এসেছেন। চৌবে বলেন, ‘সেই সব অনুষ্ঠান মর্যাদার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছিল। শনিবার সল্টলেক স্টেডিয়ামে যা ঘটেছে, তা সহজেই এড়ানো যেত।’

চৌবের মতে, এই ঘটনার প্রভাব পড়বে সেই সব সমর্থকদের ওপর, যারা বিপুল অর্থ ব্যয় করে অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে ফিরতে বাধ্য হন।

তবে তিনি সতর্ক করেন, এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব আরও মারাত্মক হতে পারে। বিশেষ করে এমন সময়ে, যখন ভারত নিজেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে খেলাধূলার অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে।

তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার মূল্য ভারতকে অনেক বেশি দিতে হবে। বিশেষ করে যখন প্রধানমন্ত্রী খেলাধূলার মাধ্যমে ভারতকে ‘সফট পাওয়ার’ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন।’

২০৩৬ অলিম্পিক, ২০৩০ কমনওয়েলথ গেমস সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্তরের টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য ভারতের আগ্রহের কথাও উল্লেখ করেন।

কল্যাণ চৌবে জানান, এই ধরনের ঘটনা আন্তর্জাতিক বিডিং প্রক্রিয়ায় ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে।

তিনি জানান, ‘যখন বড় কোনও আন্তর্জাতিক ইভেন্টের জন্য বিড করা হয়, তখন অন্য দেশগুলিও প্রতিযোগিতায় থাকে। তখন প্রশ্ন উঠতে পারে কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গ কি সত্যিই আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য প্রস্তুত? ব্যবস্থাপনা কি যথেষ্ট পরিণত?’

এই ঘটনাকে শুধু রাজ্যের নয়, গোটা ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটি বড় ধাক্কা বলে উল্লেখ করে চৌবে বলেন, এর প্রভাব বহু বছর ধরে টিকে থাকতে পারে।

তাঁর কথায়, ‘এই ঘটনার খেসারত আগামী ৫০ বছর ধরে বাংলা ও কলকাতাকে দিতে হবে। যে কোনও বাঙালি ফুটবলপ্রেমী, যিনি চান বাংলা বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিক, তিনি এর ফল ভোগ করবেন।’

কলকাতায় মেসির অনুষ্ঠান ঘিরে এই বিশৃঙ্খলার ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে যাতে নিরাপত্তার মান নিয়েও একাধিক প্রশ্ন উঠেছে।