আজকাল ওয়েবডেস্ক: কথায় বলে ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। কিন্তু রবিবার ম্যানচেস্টারে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস যা করলেন, তাতে কি বলা যায় ক্রিকেট ভদ্রলোকেরই খেলা?
ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টেস্টের পঞ্চম দিনের খেলা শেষ হতে তখনও প্রায় এক ঘণ্টা বাকি। তখনই যত নাটকের সূত্রপাত। স্টোকস খেলা শেষ করার জন্য রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দরের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করতে গেলেন।
দুই অপরাজিত ভারতীয় ব্যাটার তখন সেঞ্চুরির গন্ধ পেতে শুরু করেছেন। তাঁরা স্টোকসের প্রস্তাবে কর্ণপাত করেননি। ইংল্যান্ড অধিনায়কের সঙ্গে হ্যান্ডশেকও করেননি।
জাদেজা ও ওয়াশিংটন হ্যান্ডশেক না করায় বেজায় চটে যান স্টোকস। তিনি ব্যঙ্গ করে বলেন, ''হ্যারি ব্রুককে বল দেওয়া হচ্ছে। তোমাদের সেঞ্চুরি করতে কত সময় লাগবে?'' ব্যাপারটা এরকম সেঞ্চুরি করার জন্য জাদেজা ও ওযাশিংটনকে তাঁরা সুযোগ করে দিচ্ছেন। স্টোকসের এহেন আচরণে চটেছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তিনি তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে স্টোকসকে ধুয়ে দেন।
অশ্বিন বলেন, ''দ্বিচারিতা শব্দটা জানা আছে? ওরা তোমাদের বোলারদের সারাদিন ধরে খেলল, গোটা দিন ব্যাট করে ম্যাচটা বাঁচাল, যখন সেঞ্চুরির কাছাকাছি, তখন তোমরা খেলা শেষ করার প্রস্তাব দিলে? ওরা কেন তোমাদের প্রস্তাবে সাড়া দেবে?''

অশ্বিন আরও বলেন, ''তুমি জিজ্ঞাসা করলে, হ্যারির বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করতে চাও? নট ব্রুক, ব্রাদার।'' সেঞ্চুরি ওদের প্রাপ্য ছিল। যে কোনও বোলারকে আক্রমণে আনতেই পারো, ওরা বাধা দিত না। ব্রুককে বল করতে আনা তোমার সিদ্ধান্ত, আমাদের নয়।
অশ্বিন যা বলেছেন, একই কথা বলেছেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সুনীল গাভাসকর। ভারতের প্রাক্তন অফস্পিনার মনে করেন, সময়ের আগে খেলা শেষ করে দেওয়ার পিছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। অশ্বিন বলছেন, ''হতে পারে তুমি চাওনি, তোমার বোলাররা ক্লান্ত হয়ে পড়ুক। সেটা যদি হয় ঠিক আছে। দ্বিতীয় কারণ হল, তোমরা হতাশ হয়ে পড়েছিলে এবং ভেবে নিয়েছিলে, আমি যদি খুশি না হই, তাহলে তোমরাও খুশি থাকতে পারবে না। তবে এভাবে তো আর ক্রিকেট হয় না।''
জোর দিয়ে অশ্বিন বলছেন, ''আমি যদি অধিনায়ক হতাম, তাহলে পুরো কোটা খেলতাম। এগুলো টেস্ট রান। সেঞ্চুরি অর্জন করতে হয়। কেউ উপহার দেয় না। ওয়াশিংটন ও জাদেজার সেঞ্চুরি প্রাপ্য ছিল।''

ম্যানচেস্টার টেস্ট ভারত বাঁচাতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল। কিন্তু লোকেশ রাহুল, শুভমান গিল, রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দরের প্রচেষ্টায় টেস্ট বাঁচিয়ে দিয়েছে ভারত।
ভারত থামল চার উইকেট হারিয়ে ৪২৫ রানে। জাদেজা এবং ওয়াশিংটন পার্টনারশিপ গড়লেন ২০৩ রানের। গিল এবং রাহুল আউট হওয়ার পর ইংল্যান্ডের মনে যে সামান্য আশার প্রদীপ জ্বলেছিল তা সহজেই নিভিয়ে দিলেন দু'জনে। লর্ডসে যে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল এদিন ম্যাচ বাঁচিয়ে ভারত বুঝিয়ে দিল এখনও সিরিজ ফুরিয়ে যায়নি। দ্বিতীয় ইনিংসে ০-২ হওয়ার পর দলের হাল ধরেছিলেন গিল এবং রাহুল। চতুর্থ দিনের শেষে তাঁদের পার্টনারশিপই ম্যাচে রেখেছিল ভারতকে। সমর্থকরা আশা করেছিলেন রবিবার তাঁরা দিনের বেশিরভাগ সময়টা ব্যাট করে বাঁচিয়ে দেবেন ম্যাচ। কিন্তু এদিন দিনের শুরুটা ভাল করলেও স্টোকসের একটা বিষাক্ত বল পিচে পড়ে সোজা কেএল রাহুলের প্যাডে লাগে। তিনি আর ফিরেও তাকাননি, সোজা হাঁটা দেন ডাগ আউটের দিকে। তার পর শুভমান গিল, রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দরের সেঞ্চুরি। ভারতের থ্রি মাস্কেটিয়ার্স ম্যাচ বাঁচিয়ে দিলেন।
আরও পড়ুন: এশিয়া কাপে মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান, খেলা কি উচিত ভারতের? মুখ খুললেন সৌরভ
