আজকাল ওয়েবডেস্ক: অ্যাশেজ সিরিজের তৃতীয় টেস্টের শেষ দিনে অল আউট হয়ে গেল ইংল্যান্ড। ম্যাচ তো হাত থেকে গেলই, সঙ্গে সঙ্গে সিরিজও আবার অস্ট্রেলিয়ার দখলে।
এত প্রস্তুতি, এত কথা, মাঠের বাইরে উত্তাপ, কিন্তু মাঠের ভিতর আসল কাজটা ঠিক করে করতে পারলেন না বেন স্টোকসরা। অ্যাডিলেডে পাটা ব্যাটিং উইকেটে ম্যাচ বাঁচানোর সুযোগ থাকলেও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় বেন স্টোকসের দল।
চার উইকেট হাতে নিয়ে শেষ দিনে ব্যাট করতে নেমে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত ও চাপের মুহূর্তে ব্যর্থতার ফলে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ম্যাচ এবং কার্যত সিরিজ দুটোই হাতছাড়া করে ইংল্যান্ড।
তিন টেস্ট মিলিয়ে ইংল্যান্ডকে হারাতে মাত্র ১১ দিন লেগেছে অস্ট্রেলিয়ার। অর্থাৎ, ১১ দিনেই অ্যাশেজ নিজেদের দখলে রেখে দিলেন কামিন্সরা।
এই ইংল্যান্ড দল যে অজিদের খুব একটা বেগ দিয়েছে তাও নয়। এদিনের জয়ের ফলে টানা চতুর্থবার অ্যাশেজ ধরে রাখল অস্ট্রেলিয়ানরা। একটানা পঞ্চম সিরিজে ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে ব্যর্থ হল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বেন স্টোকসের অধিনায়কত্বে ইংলিশ ক্রিকেটের জন্য নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াল এটাই। রবিবার জেমি স্মিথের আউটটাই ইংল্যান্ডের জন্য টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে ধরা হচ্ছে।
এর আগে স্মিথ ও উইল জ্যাকস প্রায় ৫০ ওভার ধরে ক্রিজে থেকে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের হতাশ করেছিলেন। চাপ সামলে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে সিরিজে টিকে থাকার আশা জাগিয়েছিলেন তাঁরা।
কিন্তু সেই আশায় দ্রুত জল ঢেলে দেন তরুণ উইকেটকিপার-ব্যাটার স্মিথ। নতুন বলে মিচেল স্টার্ককে অকারণে আক্রমণ করতে গিয়ে টানা তৃতীয় বাউন্ডারি মারার চেষ্টায় টপ এজ করে মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ তুলে দেন তিনি। পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় এই শটই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
ম্যাচ শেষে হতাশ বেন স্টোকস স্বীকার করেন, গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে চাপ সামলাতে পারেনি ইংল্যান্ড। সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার ফল এটাই।
তাঁর মতে, চাপের সময় অস্ট্রেলিয়া ধারাবাহিকভাবে উচ্চপর্যায়ের ক্রিকেট খেলেছে। যা ইংল্যান্ড ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দেখাতে পারেনি।
চতুর্থ দিনের শেষে ছয় উইকেট হারিয়ে আগেই কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছিল ইংল্যান্ড। শেষ দিনে জেমি স্মিথ (৮৩ বলে ৬০) ও উইল জ্যাকস (১৩৭ বলে ৪৭) দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে অস্ট্রেলিয়ার পেস আক্রমণকে সাময়িকভাবে থামিয়ে দেন।
ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে তাঁদের জুটি ইংল্যান্ড শিবিরে আশার সঞ্চার করেছিল। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ৮২ রানে জিতে তৃতীয় টেস্ট নিজেদের করে নেয়।
ম্যাচের দুই ইনিংসেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন অ্যালেক্স ক্যারি। প্রথম ইনিংসে ১০৬ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৭২ রানের ইনিংস খেলে তিনি অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের ভিত গড়ে দেন।
উইকেটের পিছনেও তাঁর পারফরম্যান্স ছিল প্রশংসনীয়। ক্যারির সঙ্গে উসমান খোয়াজা ফর্মে ফিরে প্রথম ইনিংসে ৮২ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৪০ রান করেন।
বোলিংয়ে কামব্যাক ম্যাচে প্যাট কামিন্স ছয় উইকেট নিয়ে উজ্জ্বল ছিলেন। নাথান লিয়নও চোট পাওয়ার আগে পাঁচ উইকেট নিয়ে বড় প্রভাব ফেলেন ম্যাচে।
রবিবার হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। তৃতীয় টেস্টের বাকি সময়ে তাঁকে আর বল করানো যায়নি।
সিরিজের বাকি ম্যাচগুলোতে তিনি খেলতে পারবেন কিনা তা স্ক্যান রিপোর্টের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। লিয়নের অনুপস্থিতিতে মিচেল স্টার্ক ইংল্যান্ডের লোয়ার অর্ডার গুঁড়িয়ে দেন।
তিনি জেমি স্মিথ, উইল জ্যাকস ও জোফ্রা আর্চারের উইকেট তুলে নেন। স্কট বোল্যান্ড যশ টংয়ের একমাত্র উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের ইনিংস গুটিয়ে দেন দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই।
উল্লেখ্য, অ্যাশেজ সিরিজের পরবর্তী টেস্ট ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে, বক্সিং ডে-তে।
