আজকাল ওয়েবডেস্ক: অস্ট্রিয়ার গ্রসগ্লকনার পাহাড়ে তীব্র ঠান্ডায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৩ বছর বয়সী অস্ট্রিয়ান মহিলা কার্স্টিন গুর্টনার। তাঁকে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সলসবার্গের বাসিন্দা গুর্টনার নিজেকে সামাজিক মাধ্যমে ‘উইন্টার চাইল্ড’ এবং ‘মাউন্টেন পার্সন’ হিসেবে পরিচয় দিতেন।
২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি তাঁর প্রেমিক ও অভিজ্ঞ পর্বতারোহী থমাস প্লামবার্গারকে সঙ্গে নিয়ে অস্ট্রিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ গ্রসগ্লকনার আরোহণে গিয়েছিলেন।
জানা গিয়েছে, যাত্রার যে পরিকল্পনা তাঁরা করেছিলেন তার থেকে অন্তত দু’ঘণ্টা অভিযান শুরু করেন ওই যুগল। ফলে, শুরু থেকেই সময়ের থেকে পিছিয়ে ছিলেন তাঁরা।
রাস্তায় মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, প্রবল ঝোড়ো হাওয়া ও কঠিন আবহাওয়ার মুখোমুখি হন দু’জনে। পাহাড়ের চূড়ার মাত্র ৫০ মিটার নিচে এসে গুর্টনার ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
তাঁর শরীর দ্রুত হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন। অভিযোগ, ঠিক সেই সময় রাত প্রায় দুটোর দিকে প্লামবার্গার তাঁর প্রেমিকাকে অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে রেখে সাহায্য আনতে নিচে নেমে যান। যদিও প্রশ্ন উঠছে তাঁর কাছে থাকা জরুরি কম্বল বা বেভাক স্যাক ব্যবহার করলে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়া যেত। কিন্তু তিনি তা করেননি বলে তদন্তকারীদের দাবি।
আরও অভিযোগ, তিনি উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেরি করেছেন এবং ফোন সাইলেন্ট থাকায় উদ্ধারকারীদের একাধিক কলও মিস করেছেন।
ঘটনার সময় ওয়েবক্যাম ফুটেজে চূড়ার দিক থেকে কেবল একটি হেডল্যাম্প নিচের দিকে নামতে দেখা যায়, যা প্লামবার্গারের বলে অনুমান করা হচ্ছে।
প্রবল ঝোড়ো হাওয়ার কারণে উদ্ধারকারী দল ভোরের আগে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। সকাল হলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁরা গুর্টনারের নিথর দেহ উদ্ধার করে।
এই ঘটনাকে ঘিরে প্লামবার্গারের বিরুদ্ধে গুরুতর অবহেলার মাধ্যমে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে, যা প্রমাণিত হলে তাঁর সর্বোচ্চ তিন বছরের জেল হতে পারে।
তবে তাঁর আইনজীবীর দাবি, এটি ছিল ‘একটি মর্মান্তিক এবং দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা।’ ইনসব্রুক পাবলিক প্রসিকিউটরের অফিস জানিয়েছে, অভিযানের পরিকল্পনা ও অভিজ্ঞতার দিক থেকে প্লামবার্গারই ছিলেন এই ট্রিপের দায়িত্বশীল গাইড।
তাই তাঁর ওপর বড় দায়িত্ব ছিল সঙ্গী গুর্টনারের খেয়াল রাখা। মামলাটির শুনানি আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি ইনসব্রুক রিজিওনাল কোর্টে হবে বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে গুর্টনারের মৃত্যুতে তার পরিবার ও ঘনিষ্ঠরা একটি অনলাইন ট্রিবিউট পেজ খুলেছেন। সেখানে শত শত মানুষ শোকবার্তা রেখে গেছেন।
অনেক কমেন্টেই তাঁকে ‘অসাধারণ’, ‘প্রিয় কন্যা, বোন, বন্ধুবৎসল’ হিসেবে স্মরণ করা হয়েছে। পরিবার অনুরোধ করেছে, ওই পেজে যেন কেউ অভিযোগ বা গুজব শুনে কমেন্ট না করেন।
এক আবেগঘন শ্রদ্ধা বার্তায় লেখা হয়েছে, ‘এই মৃত্যুসংবাদে গভীরভাবে মর্মাহত। যদিও আমরা একে অপরকে চিনি না, তবু আন্তরিক সমবেদনা জানাই’।
