আজকাল ওয়েবডেস্ক: গোল করে শূন্যে হৃদয় আঁকেন তিনি। এটাই তাঁর গোল উদযাপনের স্টাইল। ভক্তরা আদর করে ডাকেন, ''ও মারিয়া, ও মারিয়া।''

২০২২ সালে লুসেইল স্টেডিয়ামের ফাইনালেও একই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল। আবেগাপ্লুত দি' মারিয়া গোল করে শূন্যে হৃদয় আঁকছেন। কাঁদছেন। টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে ৩৬ বছর পরে বিশ্বজয়ের পরও দি' মারিয়ার চোখে জল। সেই অ্যাঞ্জেল দি' মারিয়া আর্জেন্টিনার ক্রীড়া সাংবাদিকদের ভোটে ২০২৫ সালের সেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি পেলেন। 

তিনি পিছনে ফেলে দেন লাউতারো মার্টিনেজ ও লেয়ান্দ্রো পারদেসকে।

এর আগে ২০১৪ সালে রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য প্রথমবার এই সম্মান জিতেছিলেন। এগারো বছর পরে ফের সেই সম্মান পেলেন। 

বড় মঞ্চের খেলোয়াড় মারিয়া। ২০০৮ অলিম্পিক গেমসের ফাইনালে গোল ছিল তাঁর। ২০২১ সালের কোপা আমেরিকার ফাইনালে মারিয়ার গোলেই জিতেছিল আর্জেন্টিনা। ফাইনালিসিমা-তেও মারিয়ার নাম ছিল স্কোরলাইনে। বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোলটির মালিকের নাম অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। ফ্রান্সের রক্ষণভাগকে চিরে দিয়ে মারিয়ার বাঁ পা আলপনা এঁকে দেয়। তার পরেই আবেগের বিস্ফোরণ মারিয়ার।

জাতীয় দল থেকে এখন তিনি অবসর নিয়েছেন।  কিন্তু ঘরোয়া ফুটবলে ২০২৫ সাল ছিল দি'মারিয়ার কাছে স্মরণীয়। 

পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকা ছেড়ে দেওয়ার পরে  শৈশবের ক্লাব রোজারিও সেন্ট্রালের হয়ে খেলতে শুরু করেন তিনি। লিগে ১৬ ম্যাচে ৭ গোল করেন।  শিরোপা জয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। ২০২২ সালে আর্জেন্টিনা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে দি'মারিয়াকে কাঁদতে দেখেছে গোটা বিশ্ব। 

আগেও মারিয়ার চোখে জল দেখেছে ফুটবল বিশ্ব। ২০১৪ সালে মারাকানার সেই ফাইনালের আগে তৎকালীন কোচ আলেয়ান্দ্রো সাবেয়ার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন আর্জেন্টাইন উইংগার। পরের দিনের ফাইনালে নামতে চেয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু চোট বড় বালাই। কোয়ার্টার ফাইনালে মারিয়ার থাইয়ের পেশি ছিঁড়ে গিয়েছিল। ইঞ্জেকশন নিচ্ছিলেন, খাচ্ছিলেন যন্ত্রণা উপশমকারী ওষুধ। তাতেও পায়ের ব্যথা কমছিল না। কিন্তু সামনে স্বপ্ন ছোঁয়ার হাতছানি। নিজের ফুটবল জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার আশংকা, তবুও মাঠে নামতে চেয়েছিলেন তিনি।

ম্যানেজার আলেয়ান্দ্রো সাবেয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল মারিয়ার। খুব ভোরে তাঁর ঘরে গিয়ে মারিয়া বলেছিলেন, ”আমাকে যদি নামান তাহলে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত খেলে যাব।” সাবেয়াকে বলেছিলেন, বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখতে চান একবার। আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে নেমে এসেছিল জলের ধারা।

ফাইনালের জন্য সাবেয়া যখন দল ঘোষণা করলেন, সেই দলে রাখা হয়নি ডি মারিয়াকে। তাঁর পরিবর্তে সাবেয়ার প্রথম একাদশে জায়গা পেয়েছিলেন এনজো পেরেজ। এদিকে যন্ত্রণা কমানোর জন্য ডি মারিয়া ইঞ্জেকশন নিচ্ছিলেন। যদি দ্বিতীয়ার্ধে নামা যায়! কিন্তু সাবেয়ার কাছ থেকে সেই ডাক আর পাননি ডি মারিয়া। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের একেবারে শেষ লগ্নে মারিও গোৎজের গোলে জিতে যায় জার্মানি। স্বপ্ন ভাঙে মেসির। স্বপ্ন ভাঙে মারিয়ারও। তাঁর মনে প্রশ্নের ঝড় উঠেছিল। সাবেয়ার সামনে কেঁদে ফেলায় কি আর্জেন্টাইন কোচ অন্য কিছু মনে করেছিলেন? কোচ কি মনে করেছিলেন ডি মারিয়া নার্ভাস? তিনি তো খেলতেই চেয়েছিলেন।

তাঁর ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ফাইনালের আগে চিঠি পাঠিয়ে বলেছিল, খেলার মতো অবস্থা নেই তোমার। নামতে যেও না মাঠে। সেই সময়েই জোর চর্চা হচ্ছিল জেমস রডরিগেজকে নিয়ে। শোনা যাচ্ছিল বিশ্বকাপের পরেই জেমসকে সই করাবে রিয়াল মাদ্রিদ। আর কলম্বিয়ান তারকাকে নেওয়া হবে ডি মারিয়ার জায়গাতেই। রিয়ালের পাঠানো চিঠি না পড়েই ছিঁড়ে ফেলেছিলেন মারিয়া। জনশ্রুতি এমনটাই বলে। সেই মারিয়ার হাতে চলতি বছরের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার। 
গতবার আর্জেন্টিনার বর্ষসেরা ফুটবলারের খেতাব জিতেছিলেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। লিওনেল মেসি সবচেয়ে বেশি ১৬ বার এই খেতাব জিতেছেন।