আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১৯৮৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের ইতিহাস সম্পূর্ণরূপে বদলে যায়। এই ক্ষেত্রটি অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারত পিছিয়ে পড়ে শতযোজন। এই দিনে চণ্ডীগড়ের মোহালিতে সেমিকন্ডাক্টর কমপ্লেক্স লিমিটেডে (এসসিএল) এক রহস্যময় অগ্নিকাণ্ডের ফলে ১৯৭৬ সালে দেশীয় চিপ তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠিত এই প্ল্যান্টের উৎপাদন লাইন ধ্বংস হয়ে যায়। এই সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্টটি ১৯৮৪ সালে উৎপাদন শুরু করেছিল এবং পাঁচ হাজার ন্যানোমিটার চিপ তৈরি করত। প্রযুক্তি এবং কর্মক্ষমতার দিক থেকে, এই চিপগুলি তখন বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় মাত্র এক প্রজন্ম পিছিয়ে ছিল।

আগুন লাগার কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে কখনও জানা যায়নি, তবে এর পেছনে অনেক তত্ত্ব রয়েছে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন এটি একটি দুর্ঘটনা, আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেন এটি একটি ষড়যন্ত্র। অগ্নিকাণ্ডের তদন্তের একটি প্রধান আবিষ্কার হল যে কারখানার বেশ কয়েকটি স্থানে একই সঙ্গে আগুন লেগেছিল, যা ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’কে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছিল।

আরও পড়ুন: সবজির মতো মাত্র ১০ মিনিটেই জমি কেনা যাবে অনলাইনে! কোন রাজ্যের বাসিন্দারা পাবেন এই সুবিধা

১৯৮৯ সালে অগ্নিকাণ্ডে সংস্থাটির মোট ৭৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল। কিন্তু দেশকে এর আসল মূল্য কয়েক দশক পরে দিতে হয়েছিল। ২০২৪ সালে, ভারত ২০ বিলিয়ন ডলার (১.৭১ লক্ষ কোটি টাকা) মূল্যের সেমিকন্ডাক্টর চিপ আমদানি করেছিল। দেশের আমদানি প্রতি বছর ১৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে কারণ সর্বত্র সেমিকন্ডাক্টরের প্রয়োজন। চিপগুলি স্মার্টফোন থেকে শুরু করে চাঁদে পাঠানোর রকেট এবং টেলিভিশন থেকে শুরু করে ক্রুজ মিসাইল পর্যন্ত সবকিছুর জন্য প্রয়োজনীয়।

সেমিকন্ডাক্টর কমপ্লেক্স লিমিটেডকে নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে পুনরায় শুরু করতে প্রায় এক দশক সময় লেগেছিল। এবং যখন সংস্থাটি অবশেষে ১৯৯৭ সালে পুনরায় চালু হয়, তখন এটি ইতিমধ্যেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে ছিল। ২০০০ সালে, সম্ভাব্য বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে শর্তাবলী নিয়ে মতবিরোধের কারণে সেমিকন্ডাক্টর কমপ্লেক্স লিমিটেডে-এর ইকুইটির একটি অংশ বিক্রি করার সরকারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

আমলাতান্ত্রিক বিলম্বও সেমিকন্ডাক্টর কমপ্লেক্স লিমিটেডের অগ্রগতি ব্যাহত করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছিল। ২০০৬ সালে সরকার মহাকাশ বিভাগের অধীনে একটি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র হিসেবে সংস্থাটিকে পুনর্গঠিত করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং এর নামকরণ করে ‘সেমিকন্ডাক্টর ল্যাব’।

আরও পড়ুন: প্রতি মাসে এক লক্ষ চাকা বেতন পান, এই পরামর্শগুলি মেনে চলুন ১০ বছরে এক কোটি থাকবে আপনার কাছে

এসসিএল-এর লক্ষ্য হল সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তির ক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়ন। এসসিএল দ্বারা নির্মিত সেমিকন্ডাক্টরগুলি মঙ্গল গ্রহের অরবিটার মিশনে ব্যবহৃত হয়েছে। ভারত সরকার এসসিএল-কে আধুনিকীকরণ এবং এর সুবিধাগুলি আপগ্রেড করার চেষ্টা করছে।

২০০৫ সালের মার্চ মাসে এসসিএল মহাকাশ বিভাগের (ডিওএস) প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে আসে এবং গবেষণা ও উন্নয়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করার জন্য এর সাংগঠনিক পুনর্গঠন করা হয়। ২০০৫ সালের নভেম্বরে সোসাইটি নিবন্ধিত হয়। ২০০৬ সালে, সেমিকন্ডাক্টর কমপ্লেক্স লিমিটেডের নাম পরিবর্তন করে সেমি-কন্ডাক্টর ল্যাবরেটরি রাখা হয়। ২০২৩ সাল থেকে, এসসিএল ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।