আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রায় তিন বছরের আলোচনার পর আগামী বৃহস্পতিবার ব্রিটেনে ঐতিহাসিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (Free Trade Agreement বা FTA) স্বাক্ষর করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত দশ বছরে কোনও উন্নত অর্থনীতির সঙ্গে এই প্রথম কোনও বাণিজ্য চুক্তি করছে ভার। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এভং ভারতের মন্ত্রিসভার ছাড়পত্রের পরেই আগামী এক বছরে মধ্যে এই চুক্তি চালু হয়ে যাবে।
এই চুক্তির ফলে দুই দেশের কী কী লাভ হল-
ভারতের জন্য ছাড়
• স্কচ হুইস্কি এবং জিনের উপর আমদানি শুল্ক অবিলম্বে ১৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশে এবং ১০ বছরের মধ্যে ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।
• ব্রিটেনে তৈরি গাড়ির উপর শুল্ক বর্তমানে ১০০ শতাংশের বেশি। কোটা ব্যবস্থার অধীনে সেই শুল্ক ১০ শতাংশে কমিয়ে আনা হবে।
• প্রসাধনী, স্যামন, চকোলেট, বিস্কুট এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম-সহ বিভিন্ন ব্রিটিশ পণ্যের উপর শুল্ক হ্রাস।
আরও পড়ুন: বাংলার রাজ্যপাল হোক বা দেশের উপরাষ্ট্রপতির আসন, জগদীপ ধনখড় ‘লক্ষ্মণরেখা’ পার করেছেন বার বার
ব্রিটেনের জন্য ছাড়
ভারত থেকে রপ্তানি হওয়া ৯৯ শতাংশ ভারতীয় পণ্য ব্রিটেনের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। যা ভারতের বর্তমান বাণিজ্য মূল্যের প্রায় পুরোটাই।

ভারতীয় শিল্পে লাভ কাদের
এফটিএ থেকে যেসব ক্ষেত্রগুলি উপকৃত হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে টেক্সটাইল, জুতো, গাড়ির যন্ত্রাংশ, রত্ন ও অলঙ্কার, আসবাবপত্র, ক্রীড়া সামগ্রী, রাসায়নিক এবং যন্ত্রপাতি। ব্রিটেনে বর্তমানে এর অনেকের উপর ৪% থেকে ১৬% শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। নতুন কোটা ব্যবস্থার অধীনে বৈদ্যুতিক এবং হাইব্রিড গাড়ির ভারতীয় নির্মাতারাও অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার পাবেন।
ব্রিটিশ সরকারের অনুমান অনুযায়ী, দীর্ঘমেয়াদে এফটিএ ব্রিটেনে জিডিপি বার্ষিক ৪.৮ বিলিয়ন পাউন্ড (৫৬,১৫০ কোটি টাকা) বৃদ্ধি করতে পারে। ভারতীয় পোশাক, জুতো এবং খাদ্যপণ্যের দাম কমলে ব্রিটিশ গ্রাহকরা উপকৃত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ভারত প্রায় ৯০ শতাংশ ব্রিটিশ পণ্যের উপর শুল্ক কমাবে।
ব্রিটেন-ভিত্তিক সংস্থাগুলি যেমন ডিয়াজিও (স্কচ হুইস্কি) এবং অ্যাস্টন মার্টিন এবং জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার (টাটা মোটরসের মালিকানাধীন)-এর মতো ব্রিটিশ বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাতারা উল্লেখযোগ্যভাবে উপকৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এফটিএতে পরিষেবা খাত এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রগতিশীল প্রতিশ্রুতির কথাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে-
স্বল্পমেয়াদী প্রবেশাধিকার: ব্রিটেন ভারতীয় যোগ প্রশিক্ষক, রাঁধুনি, সঙ্গীতজ্ঞ এবং অন্যান্য চুক্তিভিত্তিক পরিষেবা প্রদানকারীদের জন্য অস্থায়ী প্রবেশাধিকার প্রদান করবে।
সামাজিক নিরাপত্তা অব্যাহতি: ব্রিটেনে কর্মরত ভারতীয় পেশাদাররা তিন বছর পর্যন্ত সামাজিক নিরাপত্তা অবদান থেকে অব্যাহতি পাবেন। এর ফলে বার্ষিক চার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
এছাড়াও, ব্রিটেনের সংস্থাগুলিকে ভারতে ২০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের অসংবেদনশীল ফেডারেল সরকারি ক্রয় টেন্ডারে দরপত্র জমা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। এর ফলে প্রতি বছর প্রায় ৪.০৯ লক্ষ কোটি টাকার প্রায় ৪০ হাজার দরপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে বলে ব্রিটেনের অনুমান।
এই চুক্তির লক্ষ্য দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ প্রবাহকে শক্তিশালী করা-
ব্রিটেনে ভারতীয়দের উপস্থিতি: বর্তমানে এক হাজারেরও বেশি ভারতীয় সংস্থা সে দেশে কাজ করছে। এক লক্ষেরও বেশি লোককে নিয়োগ করছে এবং প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার (১.৭৩ লক্ষ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করছে।
ভারতে ব্রিটেনের বিনিয়োগ: ব্রিটেন ভারতে প্রায় ৩৬ বিলিয়ন ডলার (৩.১১ লক্ষ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করেছে। যা দেশটিকে ষষ্ঠ বৃহত্তম বিদেশী বিনিয়োগকারী করে তুলেছে।
২০১৪ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর চতুর্থ ব্রিটেন সফরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কায়ার স্টারমারের সঙ্গে বাণিজ্য, জ্বালানি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করবেন। ২৫ জুলাই তিনি মলদ্বীপের উদ্দেশে রওনা দেবেন।
