আজকাল ওয়েবডেস্ক: ওড়িশার চাঁদিপুরে ডক্টর এপিজে আব্দুল কালাম দ্বীপ থেকে সফল পরীক্ষা হল দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রলয়ের। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও বা ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন)-র বিজ্ঞানীরা সোমবার এবং মঙ্গলবার দু’দফায় ক্ষেপণাস্ত্রটির সফলভাবে পরীক্ষা করেছেন। 

এই পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ দু’টি ইউজার ইভ্যালুয়েশন ট্রায়ালস-এর অংশ হিসাবে পরিচালিত হয়। এর মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্রটির সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন পাল্লার ক্ষমতা যাচাই করা হয়। সোম এবং মঙ্গলবার দু’দিনই পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ পর্যবেক্ষণ করেন ডিআরডিও-র শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীরা, ভারতীয় বায়ুসেনা ও স্থলসেনার প্রতিনিধিরা এবং সংশ্লিষ্ট শিল্প সংস্থার প্রতিনিধিরা।

আরও পড়ুন: ভেঙে ফেলা হবে কবি সুভাষ স্টেশন! পিলারে ফাটলের পরেই চরম সিদ্ধান্ত নিল মেট্রো কর্তৃপক্ষ

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, উভয় উৎক্ষেপণেই মিসাইলগুলি নির্ধারিত গতিপথ যথাযথভাবে অনুসরণ করে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে এবং সকল পরীক্ষার উদ্দেশ্য পূরণ করে। সমস্ত সাব-সিস্টেম প্রত্যাশামতো কাজ করেছে। যা ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জ (ITR) কর্তৃক স্থাপিত বিভিন্ন ট্র্যাকিং সেন্সরের মাধ্যমে সংগৃহীত পরীক্ষার ডেটা দ্বারা যাচাই করা হয়েছে। সেন্সরগুলির মধ্যে এমনকি নির্ধারিত আঘাতস্থলের নিকটবর্তী জাহাজে থাকা যন্ত্রপাতিও ছিল। 

‘প্রলয়’ একটি সম্পূর্ণভাবে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি কঠিন জ্বালানিচালিত কোয়াজি-ব্যালিস্টিক মিসাইল। যা অত্যাধুনিক গাইডেন্স ও ন্যাভিগেশন সিস্টেম ব্যবহার করে অত্যন্ত নিখুঁত নিশানায় আঘাত হানতে সক্ষম। এই মিসাইল বিভিন্ন ধরনের ওয়ারহেড বহনে সক্ষম, এবং তা নানা প্রকার লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে ব্যবহারের উপযুক্ত।

আরও পড়ুন: আমেরিকা এবং চীনের যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠেছে পাকিস্তানের মাটি! বালুচিস্তানেই কি লুকিয়ে রহস্য

এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে ডিআরডিও-র একাধিক পরীক্ষাগার যেমন, ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ল্যাবরেটরি (DRDL), অ্যাডভান্সড সিস্টেমস ল্যাবরেটরি (ASL), আর্মামেন্ট রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্টাবলিশমেন্ট (ARDE), হাই এনার্জি ম্যাটেরিয়ালস রিসার্চ ল্যাবরেটরি (HEMRL), ডিফেন্স মেটালার্জিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি (DMRL), টার্মিনাল ব্যালিস্টিক্স রিসার্চ ল্যাবরেটরি (TBRL), রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্টাবলিশমেন্ট (ইঞ্জিনিয়ার্স)এবং ITR ইত্যাদির সম্মিলিত সহযোগিতায় তৈরি হয়েছে। এছাড়াও এতে ভারত ডায়নামিক্স লিমিটেড (BDL) ও ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড (BEL) সহ বহু সংস্থার অবদান রয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং এই সফল উৎক্ষেপণের জন্য ডিআরডিও, সশস্ত্র বাহিনী এবং শিল্প সংস্থাগুলিকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, “এই প্রযুক্তিসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র সশস্ত্র বাহিনীর প্রযুক্তিগত ক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাস আরও বৃদ্ধি করবে।”

প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের সচিব এবং ডিআরডিও-র চেয়ারম্যান ড. সমীর ভি কামাত সংশ্লিষ্ট সমস্ত দলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “এই পর্ব-১ এর সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ ভবিষ্যতে সশস্ত্র বাহিনীতে মিসাইলটির অন্তর্ভুক্তির পথ প্রশস্ত করল।”

প্রসঙ্গত, প্রলয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ১৫০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম। ২০২২ সালে ভারতীয় সেনার অস্ত্রভাণ্ডারে সামিল করা হয় প্রলয়-কে। এর পর থেকে সেটিকে উন্নত করার কাজ করছে ডিআরডিও।

২০২০ সালে লাদাখে চীনা আগ্রাসন এবং গালওয়ান সংঘর্ষের পর নিয়ন্ত্রণ রেখায় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতীয় সেনা। ২০২২ সালে লাদাখে মোতায়েন করা হয় প্রলয়। বিভিন্ন দেশ এই ক্ষেপণাস্ত্র কেনার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইতিমধ্যেই।