বীরেন ভট্টাচার্য, নয়াদিল্লি:‌ লোকসভা নির্বাচনের আবহে প্রবল অস্বস্তিতে বিজেপি এবং তাদের জোটসঙ্গী জেডিএস। বাবা ও ছেলের বিরুদ্ধে একসঙ্গে যৌন নির্যাতন এবং নানারকমভাবে হেনস্থার অভিযোগ তুলেছেন তাঁদেরই বাড়ির পরিচারিকা। প্রায় সাড়ে তিন বছর তাঁদের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করা মহিলা এবং তাঁর মেয়েকে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে। এমনকী, ভিডিও কলে তাঁদের সঙ্গে অভব্য আচরণের অভিযোগ উঠেছে। প্রাজল রেবান্না এবং তাঁর বাবা এইচডি রেবান্নার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর এই ঘটনা সামনে আসতেই বিজেপির দাক্ষিণাত্য জয়ের স্বপ্নে কাঁটা ফুটেছে। অভিযুক্ত প্রাজল রেবান্না দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন বলে দাবি একটি সূত্রের।
 প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়ার ছেলে এইচডি কুমারস্বামীর ভাইপো প্রাজল রেবা‌‌ন্না। হাসান লোকসভা আসনে তাঁকে প্রার্থী করেছে জেডিএস। তাঁকে একাধিক মহিলার সঙ্গে অভব্য আচরণ করতে দেখা গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া এবং সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে। বিষয়টি সামনে আসতেই তাঁর বিরুদ্ধে বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করার নির্দেশ দিয়েছে কর্নাটক সরকার। হাসান লোকসভা আসনে ভোটগ্রহণ হয়ে গেলেও, ৭ মে ১৪টি আসনে ভোট হবে। তার আগে এই ভিডিও সামনে আসায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বিজেপি এবং জেডিএস নেতাদের। রাজ্য বিজেপি নেতা দেবরাজ গৌড়া জানিয়েছেন, প্রাজল রেবান্না সহ দেবগৌড়া পরিবারের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগের কথা জানিয়ে রাজ্য সভাপতি বিওয়াই বিজয়েন্দ্রকে গত ডিসেম্বরে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। দেবরাজের আরও দাবি, তাঁর কাছে একটি পেন ড্রাইভ রয়েছে যেটিতে মহিলাদের যৌন হেনস্থার ২,৯৭৬টি ভিডিও রয়েছে। এই ভিডিও দেখিয়ে তাঁদের ব্ল্যাকমেল করে বারবার যৌন হেনস্থা করা হয়েছে বলে দাবি দেবরাজ গৌড়ার। রাজ্য বিজেপি সভাপতিকে দেওয়া চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘‌যদি আমরা জেডিএসের সঙ্গে জোট করি এবং হাসান কেন্দ্রে জেডিএস প্রার্থী হয়, তাহলে এই ভিডিওটি ব্রহ্মাস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি আমাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনায় যুক্ত পরিবারের দলের সঙ্গে জোট করার অভিযোগ উঠবে। ফলে জাতীয়স্তরে আমাদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে।’‌ কংগ্রেস নেতা পবন খেরা দেবরাজ গৌড়ার চিঠি তাঁর এক্স হ্যান্ডলে পোষ্ট করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘‌কেন বিষয়টি জানার পরেও জেডিএসের সঙ্গে জোট করেছে বিজেপি? কেন পরপর ধর্ষণের ঘটনায় যুক্ত এবং সেগুলি ভিডিও করে রেখে দেওয়া ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি? প্রাজল রেবান্নার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ থাকলেও কেন তাঁর সঙ্গে একমঞ্চে প্রচার করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি? কেন এই ঘটনায় নীরব প্রধানমন্ত্রী?‌’‌ তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেব বলেছেন, ‘‌এই যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিও সামনে আসায় স্পষ্ট হয়েছে, জেডিএসের জোটসঙ্গী বিজেপি মহিলাদের কীভাবে সম্মান করে। একজন বিজেপি নেতা বলেছেন, তিনি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন। যদিও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সন্দেশখালিতে রাজ্য পুলিশ দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। বাংলায় নারী সম্মান নিয়ে এত কথা বলার পর কর্নাটকের এই ভিডিও নিয়ে বিজেপি নেতাদের জবাব চাই।’‌ তৃণমূলের আরেক সাংসদ সাগরিকা ঘোষ বলেন, ‘‌বিজেপি যখন রেবান্নার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানত, তারপরেও তাঁকে প্রার্থী করা হল কেন? তাঁকে কেন দেশ ছেড়ে চলে যেতে দেওয়া হল? বিজেপির বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও প্রকল্পের অর্থহীন রূপ সামনে চলে এসেছে।’‌