শীতকাল মানেই শরীরের এক নীরব পরিবর্তনের সময়। দিনের আলো কমে যাওয়া, রাত বড় হওয়া আর দৈনন্দিন রুটিনে বদল-এই সবকিছুই মহিলাদের শরীরে আলাদা প্রভাব ফেলে। শুধু এনার্জি কমে যাওয়া বা মুড বদল নয়, শীতের প্রভাব পড়ে হরমোন, ঋতুস্রাবচক্র এবং সার্বিক প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপরও। তাই ঠান্ডার মরশুমে কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি, সেবিষয়ে জানালেন আভা সার্জি সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও চিফ কনসালটেন্ট ড. বাণী কুমার মিত্র। 

শীতকালে সূর্যের আলো কম পাওয়ার ফলে শরীরে মেলাটোনিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এই হরমোন ঘুম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করলেও এর প্রভাব পড়ে শরীরে। ফলস্বরূপ এনার্জি কমে যায়, মনমরা ভাব এবং ধীরগতির মেটাবলিজম দেখা দেয়। অনেক মহিলার মাসিক চক্রে পরিবর্তন, রাগ বা খিটখিটে মেজাজ, অস্বাভাবিক খাবারের ইচ্ছে কিংবা বেশি রক্তপাতের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যাঁদের পিসিওএস বা থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে শীতকালে উপসর্গ আরও বেড়ে যায়।

শীতকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এই সময়ে সর্দি-কাশি, ভাইরাল সংক্রমণ সহজেই হয়। ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হলে শরীরে প্রদাহ বাড়ে, যা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। ফলে অনেক মহিলার ইউরিন ইনফেকশন, পেলভিক অস্বস্তি বা পুরনো গাইনোকোলজিক সমস্যাগুলো আবার মাথাচাড়া দেয়।

খাবারের দিক থেকেও শীতকালে বাড়তি সতর্কতা দরকার। শীত এলেই ভারী ও বেশি কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবারের দিকে ঝোঁক বাড়ে। কিন্তু অতিরিক্ত চিনি ও প্রসেসড খাবার পিএমএস, ফোলাভাব ও ক্লান্তি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। শীতকালে মৌসুমি ফল, শাকসবজি, প্রোটিন, ভাল ফ্যাট ও হালকা মশলাযুক্ত খাবার খেলে হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।

এছাড়া শীতকালে সূর্যের আলো কম পাওয়ায় অনেক মহিলার ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হয়, যা হরমোন, ওজন ও প্রজনন স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। এক্ষেত্রে হালকা শরীরচর্চা, নিয়মিত হাঁটা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট নেওয়া জরুরি।

শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। শীতে ‘ফিল গুড’ হরমোন সেরোটোনিন নিঃসরণ কমতে পারে, ফলে মন খারাপ, অবসাদ বা বিরক্তি দেখা দেয়। অতিরিক্ত স্ট্রেস হলে তা ওভুলেশন ও মাসিক চক্রেও প্রভাব ফেলে। তাই পর্যাপ্ত ঘুম, রোদে বসা, মানসিক বিশ্রাম নেওয়া খুব দরকার।