সময়ের সঙ্গে বদল আসে সবকিছুতেই। বাদ যায় না প্রেম, বন্ধুত্ব, প্রতিশ্রুতির চিরাচরিত ধারণাগুলোতেও। ‘সিচুয়েনশনশিপ’ হোক থেকে ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’ সহ আরও নানা সম্পর্কের সমীকরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে নতুন প্রজন্ম। বদলে জেন-জি-র কাছে এখন নতুন ডেটিং ট্রেন্ড হয়ে উঠেছে ‘জিপ-কোডিং’। এটি এমন এক প্রবণতা যেখানে মানুষ তাদের অ্যাপ-ভিত্তিক সঙ্গী নির্বাচনে শুধু ভৌগলিক নৈকট্যকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। অর্থাৎ আপনার কাছাকাছি এলাকা বা পোস্টার কোডের মধ্যে মানুষের সঙ্গেই সম্পর্কে জড়াতে পারবেন। 

আদতে জিপ-কোডিং কী? সাধারণভাবে বলতে গেলে, জিপ-কোডিং হল এমন একটি ডেটিং পন্থা যেখানে ব্যবহারকারীরা অ্যাপ-ফিল্টার সীমিত রাখে তাদের চারপাশের এলাকা বা একই পোষ্টাল কোডের মানুষের মধ্যে। এর আরও একটি রূপ বিশেষভাবে নজর কেড়েছে তা হল ‘সিচুয়েশনাল মনোগ্যামি’। এই ধরনের সম্পর্ক এমন হতে পারে যেখানে দু’জন মানুষ তখনই একসঙ্গে থাকেন যখন তারা একই এলাকায় বসবাস করেন। 

কেন এই প্রবণতা দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে

সুবিধাজনকতা ও সহজ যোগাযোগ: সঙ্গী কাছাকাছি থাকলে দেখা করার জন্য দীর্ঘ সময় লাগে না। কাজের মাঝে খানিক সময় পেলেই প্রিয় মানুষের সঙ্গ পাওয়া যায়। 

পরিচিতি ও নিরাপত্তার অনুভূতি: একই এলাকায় থাকা মানুষদের সঙ্গে পরিচিতি তৈরি করা সহজ। পারস্পরিক পরিচিতি এবং চেনা পরিবেশ মানসিক ‘নিরাপদ জোন’ গঠন করে। 

দ্রুত ফল পাওয়া যায়: ডেটিং অ্যাপগুলোর জিপ-কোড ফিল্টার ব্যবহার করে, ব্যবহারকারীরা দ্রুত মিল খুঁজে পান এবং সঙ্গীর সঙ্গে ‘দূরত্ব’ কে একটি বড় বাধা হিসেবে দেখেন না। 

আধুনিক জীবনের সঙ্গে মানানসই: কাজ, পড়াশোনা, সামাজিক ব্যস্ততা-অনেকের জন্য ডেটিং এমন হতে হবে যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে ‘ফিট’ করে। জিপ-কোডিং সেই সুবিধাই এনে দিয়েছে। 

যদিও জিপ-কোডিং অনেকের কাছে আকর্ষণীয়, তবে এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। এটি ‘ভৌগলিক পক্ষপাত’ তৈরি করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু একই এলাকায় থাকা বা একই পোস্টাল কোডে থাকা ব্যক্তিদের প্রতি অগ্রাধিকার দেওয়া একটি অবচেতন শ্রেণিগত বা সামাজিক বিচ্যুতি হতে পারে। আবেগগত গভীরতা বা স্থায়ী বন্ধনের সুযোগ কম হতে পারে। ‘সিচুয়েশনাল মনোগ্যামি’ মডেলে, সম্পর্ক অস্থায়ী হতে পারে। অর্থাৎ দূরে গেলে বা জীবন পরিবর্তন হলে সঙ্গীর ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসতে পারে, যা সম্পর্ককে অটলভাবে গড়ে তুলতে বাধা দিতে পারে।

নিঃসন্দেহে আধুনিক ডেটিং প্রবণতা ‘জিপ-কোডিং’  তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। তবে মনোবিদ বা সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জিপ-কোডিং সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদী ও স্থায়ী করতে হলে শুধুমাত্র নিকটতা যথেষ্ট নয়। সম্পর্ককে সুদৃঢ় করতে দরকার খোলামেলা যোগাযোগ, মানসিক বোঝাপড়া এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা। বারবার দেখা হওয়ার কারণে স্বাচ্ছন্দ্য তৈরি হওয়া জিপ-কোডিং সম্পর্কের অন্যতম ভিত্তি ঠিকই, তবে এটি গভীর বন্ধন গড়ার জন্য পুরোপুরি পর্যাপ্ত নয়।