আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঘণ্টাখানেক আগেই, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেছে। শুধু হাসিনাই নয়, ফাঁসির সাজা ঘোষণা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের। এই দু'জনই এই মুহূর্তে ভারতে। সাজা ঘোষণার পর থেকেই, নজরে ছিল, সে দেশের বিদেশমন্ত্রকের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। সোমবার বিকেলে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রক ভারত থেকে এই দু'জনের 'হস্তান্তর'-এর আবেদন জানিয়েছে।
বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রকের জারি করা বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, 'আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আজকের রায়ে পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল জুলাই হত্যাকান্ডের জন্য অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং দন্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিদের দ্বিতীয় কোন দেশ আশ্রয় দিলে তা হবে অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞার সামিল।'

তারপরেই, দু'দেশের প্রত্যর্পণ চুক্তি মনে করিয়ে, বিদেশমন্ত্রক বিবৃতিতে লিখেছে, 'আমরা ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই তারা যেন অনতিবিলম্বে দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে এটি ভারতের জন্য অবশ্য পালনীয় দায়িত্বও বটে।' প্রত্যর্পন চুক্তি প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, হাসিনা জমানাতেই দু'দেশের মধ্যে এই চুক্তি হয়েছিল, ২০১৩ সালে। পরে, ২০১৬ সালে চুক্তি সংশোধন করা হয়, প্রত্যর্পন চুক্তিকে আরও সহজ করার লক্ষ্যে।
সোমবার দুপুরে শেখ হাসিনার ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে ভারতে আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণার পর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি। অভিযোগ করেন, এই রায় এসেছে ‘একটি অনির্বাচিত সরকারের প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত রিগড ট্রাইব্যুনাল’ থেকে, যার মূল লক্ষ্য তাঁর দল আওয়ামী লিগকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দুর্বল করে দেওয়া।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০২৪ সালে ছাত্র আন্দোলনের সময়ে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পরপরই প্রকাশিত বিবৃতিতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মহম্মদ ইউনুসের বিশৃঙ্খল, সহিংস, সামাজিক ভাবে পিছিয়ে দেওয়া প্রশাসন কোটি কোটি বাংলাদেশিকে কোনওভাবেই বোকা বানাতে পারবে না। তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার এই প্রচেষ্টা তারা বুঝে গেছে।’
হাসিনা আরও বলেন, 'যে তথাকথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিচার পরিচালনা করেছে, তার কখনওই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্য ছিল না। এমনকী, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সম্পর্কে প্রকৃত সত্য উদঘাটনেরও কোনও চেষ্টা করেনি ট্রাইব্যুনাল।’
উল্লেখ্য, সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের আগস্টে ঢাকা থেকে পালিয়ে ভারতে আত্মগোপনে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সোমবার তাঁর ফাঁসির সাজা ঘোষণা করে।
বঙ্গবন্ধুর মেয়ের ফাঁসি, বাংলাদেশেই মানবতাবিরোধী অপরাধে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলা দায়ের হয়েছিল।
সোমবার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করল। এই রায় ছিল মোট ৪৫৩ পাতার। রায়ের মোট ছ'টি অংশ ছিল। ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার রায়ের শেষ অংশ পড়ে শোনান।
