আজকাল ওয়েবডেস্ক: সিনেমার পর্দা হোক বা জনপ্রিয় সাহিত্য, শারীরিক মিলনের দৃশ্য মানেই যেন তীব্র আবেগময় শব্দের বহিঃপ্রকাশ। এই ধারণা এতটাই বহুল প্রচলিত যে, অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, সঙ্গমের মুহূর্তে মুখে শব্দ করাই কি বিধেয়?
উল্টো মতামতও আছে। কেউ কেউ মনে করেন সম্পূর্ণ নীরব থাকলে যৌন আনন্দ আরও গভীর ও তীব্র হয়ে ওঠে। বিষয়টি নিয়ে কৌতূহল এবং ভুল ধারণা, দুই-ই প্রবল। তবে যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ এবং মনোবিদরা জানাচ্ছেন, এই বিষয়ে কোনও বাঁধাধরা নিয়ম নেই। আনন্দ বাড়বে না কমবে, তা নির্ভর করে সম্পূর্ণত ব্যক্তির মানসিকতা এবং দুই সঙ্গীর পারস্পরিক বোঝাপড়ার উপর।
শব্দের ভূমিকা
শারীরিক মিলনের সময় স্বতঃস্ফূর্ত শব্দ বা শীৎকারকে যৌন উত্তেজনার স্বাভাবিক প্রকাশ হিসেবেই দেখা হয়। এর একাধিক মনস্তাত্ত্বিক দিক রয়েছে।
১। যোগাযোগের মাধ্যম: শব্দ এক্ষেত্রে এক ধরনের তাৎক্ষণিক যোগাযোগ হিসাবে কাজ করে। সঙ্গী ঠিক কোন স্পর্শে বা মুহূর্তে আনন্দ পাচ্ছেন, তা তাঁর মুখ থেকে বেরোনো স্বতঃস্ফূর্ত শব্দ অনেকটাই বুঝিয়ে দেয়। এটি মিলনকে আরও আনন্দদায়ক করে তুলতে সাহায্য করে।
২। সঙ্গীকে উদ্দীপিত করা: বহু মানুষের ক্ষেত্রে, সঙ্গীর মুখ থেকে আনন্দের শব্দ শোনা এক বড় উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। এটি তাঁদের আত্মবিশ্বাস জোগায় এবং মানসিকভাবে আরও উত্তেজিত করে তোলে।
৩। নিজের আনন্দ বৃদ্ধি: অনেক সময়, আবেগ চেপে রাখার বদলে প্রকাশ করলে তা নিজের আনন্দকেও বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। শব্দ করার মধ্যে দিয়ে শারীরিক উত্তেজনার একটি মানসিক মুক্তি ঘটে, যা চূড়ান্ত তৃপ্তির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে
নীরবতার শক্তি
অন্যদিকে, একদল বিশেষজ্ঞ মনে করেন, নীরবতাও যৌন আনন্দকে এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিতে পারে।
১। অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের প্রয়োগ: যখন একটি ইন্দ্রিয় কম সক্রিয় থাকে, তখন বাকি ইন্দ্রিয়গুলি, বিশেষ করে স্পর্শের অনুভূতি, অনেক বেশি প্রখর হয়ে ওঠে। সঙ্গীর নিঃশ্বাসের শব্দ, হৃদস্পন্দন বা শরীরের সামান্য নড়াচড়াও তখন অনেক বেশি অর্থবহ এবং উত্তেজক মনে হতে পারে।
২। গভীর মানসিক সংযোগ: নীরবতা দুই সঙ্গীর মধ্যে একটি গভীর, নিবিড় মানসিক সংযোগ তৈরি করতে পারে। এক্ষেত্রে মনোযোগ শব্দের দিকে না গিয়ে অনুভূতির দিকে যায়। কোনওরকম বাহ্যিক পারফরম্যান্সের চাপ থাকে না বলে দু’জনেই নিজেদের আবেগ ও শারীরিক সংবেদনের উপর বেশি মনঃসংযোগ করতে পারেন।
৩। আত্ম-উপলব্ধি: কিছু মানুষের জন্য (বিশেষত যাঁরা সহজেই মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন) নীরবতা নিজের শারীরিক আনন্দকে গভীরে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। বাহ্যিক শব্দের অনুপস্থিতি তাঁদের নিজেদের অনুভূতির উপর মনোসংযোগ করতে এবং চরম মুহূর্তে পৌঁছতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে
সব মিলিয়ে, যৌনতা একটি অত্যন্ত ব্যক্তিগত এবং স্বতঃস্ফূর্ত অভিজ্ঞতা। এতে শব্দ করা বা না-করার কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। মূল বিষয় হল সঙ্গীর স্বাচ্ছন্দ্য এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া। যদি কোনও এক পক্ষ সঙ্গীকে খুশি করার চাপে শব্দ করেন, বা উল্টোদিকে, নিজের আবেগ চেপে রেখে নীরব থাকেন, তবে তা আনন্দের বদলে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সুতরাং, সঙ্গমের মুহূর্তে শব্দ করা বা না করাটা সম্পূর্ণই ব্যক্তিগত পছন্দ। আসল কথা হল, দুই সঙ্গীই সেই মুহূর্তে আনন্দ বোধ করছেন কিনা। আনন্দ শব্দের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং মানসিক এবং শারীরিক সংযোগের গভীরতার উপর নির্ভরশীল।
