‘মর্নিং উড’ শব্দটি হল এক ধরনের স্ল্যাং, যার চিকিৎসা-বৈজ্ঞানিক নাম হলো নকটার্নাল পেনাইল টিউমেসেন্স। এর অর্থ হলো ঘুমের মধ্যে বা ভোরের দিকে ঘুম থেকে ওঠার সময় পুরুষাঙ্গের উত্থান হওয়া। অনেক সময় ঘুমের মাঝে বা সকালে ঘুম ভাঙার পর পুরুষরা এমন অবস্থার মুখোমুখি হন। এটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এটিকে ‘মর্নিং গ্লোরি’ও বলা হয়। বিশেষ করে আমেরিকায় এই নামটি বেশি ব্যবহৃত হয়।

মর্নিং উড হওয়ার একটি বড় কারণ হলো আপনার প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম (PSNS)। এই সিস্টেম শরীরে এমন অনেক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে, যেগুলো আপনি সচেতনভাবে ভাবেন না—যেমন হজম প্রক্রিয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদস্পন্দন এবং যৌন উত্তেজনা।

ঘুমের সময়, বিশেষ করে র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট (REM) স্লিপ চলাকালে, এই সিস্টেম বেশি সক্রিয় থাকে। বেশিরভাগ মানুষ REM স্লিপ চলাকালে বা এর পরে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন, তাই এই সময়ে লিঙ্গ উত্থিত হওয়ার সম্ভাবনা স্বাভাবিকভাবেই বেশি থাকে।
এছাড়াও আরও কিছু কারণ আছে, যেগুলোর ফলে মর্নিং উড হতে পারে, যেমন—

ঘুমের সময় শরীরে কিছু হরমোনাল পরিবর্তন হয়, যা লিঙ্গে রক্ত প্রবাহ বাড়ানোর সংকেত দেয়। পূর্ণ মূত্রথলি (ব্লাডার) থাকলেও মর্নিং উড হতে পারে, কারণ এটি স্যাক্রাল নার্ভ-এর উপর চাপ ফেলে, যা মস্তিষ্ককে উত্থানের সংকেত দেয়।

এছাড়াও, ঘুমের মধ্যে শরীরের অবস্থান বদলানো বা উল্টে যাওয়ার মতো অপ্রত্যাশিত উত্তেজনা (accidental stimulation) থেকেও মর্নিং উড হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, মর্নিং উড সাধারণত যৌন স্বপ্নের কারণে হয় না।

কাদের মর্নিং উড হতে পারে?

যাদের লিঙ্গ আছে, তারা যে কোনও বয়সেই ঘুমের মধ্যে উত্থিত লিঙ্গ (erection) অনুভব করতে পারেন। এমনকি গর্ভের ভ্রূণ অবস্থাতেও শিশুর লিঙ্গে উত্থান হতে পারে।

মর্নিং উড বনাম মর্নিং বিন

যাদের ক্লিটোরিস আছে, তাদের ক্ষেত্রেও ঘুমের সময় উত্তেজনা হতে পারে, যাকে বলা হয় ‘মর্নিং বিন’। এই সময় ক্লিটোরিস বড় হয়ে যায় এবং যোনি ভিজে যেতে পারে। বৈজ্ঞানিকভাবে একে বলা হয় নকটার্নাল ক্লিটোরাল টিউমেসেন্স (Nocturnal Clitoral Tumescence)।

মর্নিং উড কি স্বাভাবিক?
হ্যাঁ, ঘুমের সময় লিঙ্গে উত্থান হওয়া সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ব্যাপার। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে নকটার্নাল পেনাইল টিউমেসেন্স বলা হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, একজন পুরুষ রাতে ঘুমের মধ্যে গড়ে চার থেকে পাঁচ বার পর্যন্ত উত্থান অনুভব করতে পারেন। এর মধ্যে একটি উত্থান সাধারণত ভোরের দিকে ঘটে, যেটি আমরা মর্নিং উড নামে জানি।

তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মর্নিং উড হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা কমে যায়। যেমন—যৌবনকালে এটি প্রায় প্রতিদিন হতে পারে, কিন্তু বয়স ৪০–৫০ পেরোলে এর সংখ্যা কমে আসতে পারে। শুধু তাই নয়, বয়সের কারণে বা শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের ফলে সকালের উত্থান আগের মতো শক্ত বা দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে।
অর্থাৎ, মর্নিং উড একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যা মূলত শরীরের স্নায়ুতন্ত্র, হরমোন, এবং রক্তসঞ্চালনের সঙ্গে সম্পর্কিত। বয়স বাড়লে এটি কমে আসা বা দুর্বল হওয়া স্বাভাবিক—এ নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তার প্রয়োজন নেই।

কখন মর্নিং উড নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা উচিত?

সাধারণভাবে মর্নিং উড হওয়া মানে আপনার শরীরের সবকিছু ঠিকঠাক কাজ করছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সকালের উত্থান প্রায় ১০ মিনিট স্থায়ী হয়, তবে অনেক সময় এটি ৩০ মিনিট পর্যন্তও থাকতে পারে—এটিও স্বাভাবিক।

তবে কিছু ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া জরুরি—


যদি আপনার সকালের উত্থান এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে থাকে, তবে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
আর যদি উত্থান চার ঘণ্টারও বেশি সময় স্থায়ী হয়, তবে অবিলম্বে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে প্রিয়াপিজম (Priapism) বলা হয়, যা একটি গুরুতর অবস্থা।
অর্থাৎ, মর্নিং উড সাধারণত স্বাভাবিক হলেও, যদি এটি অস্বাভাবিকভাবে দীর্ঘ সময় ধরে থাকে বা ব্যথা/অস্বস্তির সঙ্গে যুক্ত হয়, তাহলে দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।