আজকাল ওয়েবডেস্ক: অফিসে কাজের প্রবল চাপ কিংবা বাড়িতে কোনও বিষয়ে মনখারাপ বা একাকিত্ব গ্রাস করলেই মনটা কেমন আইসক্রিম, চিপ্স বা চকোলেটের জন্য আনচান করে ওঠে? পেটে খিদে না থাকলেও, শুধু মানসিক শান্তি পেতে ফ্রিজ খুলে পছন্দের খাবার খোঁজেন? তাহলে সতর্ক হন এখনই। আপনি হয়তো ‘ইমোশনাল ইটিং’ বা আবেগতাড়িত খাদ্যাভ্যাসের শিকার।
‘ইমোশনাল ইটিং’ কথাটির অর্থ হল, শারীরিক খিদের পরিবর্তে মানসিক চাহিদা বা আবেগ মেটানোর জন্য খাবার খাওয়া। পুষ্টিবিদ এবং মনোবিদদের মতে, এটি নিছকই খাদ্যাভ্যাস নয়, বরং মানসিক টানাপড়েনের সঙ্গে যুঝে ওঠার একটি ভ্রান্ত পদ্ধতি। রাগ, দুঃখ, উদ্বেগ, মানসিক চাপ বা একঘেয়েমির মতো অনুভূতিগুলি সামাল দিতে না পেরে অনেকেই খাবারের মধ্যে সাময়িক মুক্তি খোঁজেন। চিনি বা ফ্যাটে ভরপুর খাবার মস্তিষ্কে ক্ষণিকের জন্য ‘ফিল-গুড’ হরমোন ডোপামিনের ক্ষরণ বাড়ায়, যা আমাদের সাময়িক স্বস্তি দেয়। কিন্তু এই স্বস্তি একেবারেই অস্থায়ী এবং এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
শরীরে কী কী প্রভাব পড়ে?
 
 ইমোশনাল ইটিং-এর ফলে শরীরে একাধিক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
 
 ১। ওজন বৃদ্ধি এবং ওবেসিটি: আবেগতাড়িত হয়ে খাবার খাওয়ার সময় মানুষ সাধারণত ক্যালোরি-যুক্ত, অস্বাস্থ্যকর খাবারই বেছে নেয়। এর ফলে দ্রুত ওজন বাড়ে এবং ওবেসিটির মতো সমস্যা দেখা দেয়, এই স্থূলতা থেকে আরও অনেক রোগের জন্ম হয়।
 
 ২। ডায়াবিটিসের ঝুঁকি: অতিরিক্ত মিষ্টি এবং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘ দিন ধরে এই অভ্যাস চলতে থাকলে টাইপ-২ ডায়াবিটিসের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
 
 ৩। হৃদরোগের আশঙ্কা: ভাজাভুজি বা প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকা ট্রান্স ফ্যাট রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ, ধমনীতে ব্লকেজ এবং হৃদরোগের আশঙ্কা তৈরি হয়।
 
 ৪। হজমের সমস্যা: অসময়ে অতিরিক্ত খাওয়া এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে বদহজম, অ্যাসিডিটি এবং অন্ত্রের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
 
 ৫। মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি: সাময়িক স্বস্তির পর অতিরিক্ত খাওয়ার জন্য অপরাধবোধ, লজ্জা এবং আত্মগ্লানি তৈরি হয়। এর ফলে আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং উদ্বেগ ও অবসাদের মতো মানসিক সমস্যা আরও বাড়তে পারে। এটি এক অস্বাস্থ্যকর চক্র তৈরি করে, যেখানে মানসিক কষ্ট কমাতে গিয়ে খাওয়ার পরিমাণ বাড়ে এবং খাওয়ার পর মানসিক কষ্ট আরও বেড়ে যায়।
 
 আরও পড়ুন: স্ত্রীর পিঠ জিভ দিয়ে চেটে দেয় পুরুষ, স্ত্রী যদি পাল্টা লেহন করে, তবেই হয় মিলন! পৃথিবীর একমাত্র জীবিত ড্রাগন এরাই
কীভাবে বেরোবেন এই চক্র থেকে?
 
 বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রথম ধাপ হল সচেতনতা। কোন পরিস্থিতিতে বা কোন আবেগের বশে আপনি খাচ্ছেন, তা চিহ্নিত করতে একটি ডায়েরি রাখতে পারেন। মানসিক চাপ কমাতে খাবারের বদলে অন্য কোনও স্বাস্থ্যকর উপায়, যেমন- হাঁটা, ব্যায়াম করা, গান শোনা বা প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলার অভ্যাস তৈরি করুন। হাতের কাছে অস্বাস্থ্যকর খাবারের বদলে ফল বা স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস রাখুন। যদি সমস্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে পুষ্টিবিদ বা মনোবিদের সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না।
 
 মনে রাখবেন, খাবার সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে, কিন্তু মানসিক সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে পারে না। তাই আবেগের সঙ্গে লড়াই করতে খাবারের সাহায্য না নিয়ে, তার মূল কারণ খুঁজে বের করে সমাধান করাই সুস্থ থাকার একমাত্র পথ।
