আজকাল ওয়েবডেস্ক: যদি এমন কোনও বিস্কুট থাকে যা লক্ষ লক্ষ ভারতীয়ের মনে স্থান করে নিয়েছে তা হল পার্লে-জি। এটিকে সাদা-হলুদ রঙের প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে সহজেই চেনা যায়। এই বিস্কুটটি শৈশবের স্মৃতি, স্কুলের টিফিন এবং আরামদায়ক চা-পানের আচারে ভারতীয় পরিবারে সমার্থক। কিন্তু আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন যে পার্লে-জি-তে 'জি' বলতে আসলে কী বোঝায়?

বেশিরভাগ মানুষের ধারণা 'জি' মানে 'গ্লুকোজ'। এই ধারণাটি যদিও সম্পূর্ণ ভুল নয়। পার্লে-জি আসলে একটি গ্লুকোজ বিস্কুট হিসেবে বাজারজাত করা হয়েছিল। আসল ঘটনাটি আরও আকর্ষণীয়। 'জি' আসলে 'জিনিয়াস' এর সংক্ষিপ্ত। সংস্থার উদ্ভাবনী শক্তি প্রতিফলিত করার জন্য এই শব্দটি বেছে নেওয়া হয়েছে।

১৯২৯ সালে ভারতে ব্রিটিশ শাসনাকালে মোহনলাল দয়াল পার্লে প্রোডাক্টস প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যাপক খাদ্য সঙ্কটের সময় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রেশনে দেওয়া হত। অনেক পরিবারকে দিনে দু’বেলা খাবারের জন্য লড়াই করতে হত। এই কঠিন সময়ে পার্লে এমন একটি বিস্কুট তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় যা সাশ্রয়ী, শক্তি সমৃদ্ধ এবং সহজ উপাদান- আটা, চিনি এবং উদ্ভিজ্জ তেল দিয়ে তৈরি। এই বিস্কুটটি পুষ্টিকর, সস্তা এবং পেট ভরাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করত। এটি মূলত 'জিনিয়াস বিস্কুট' নামে পরিচিত ছিল, যা পরবর্তীতে বর্তমানে আইকনিক পার্লে-জিতে রূপান্তরিত হয়।

১৯৬০-এর দশকে, পার্লে ব্র্যান্ড তাদের বিস্কুটের প্যাকেটে একটি নতুন মুখ যুক্ত করে। শিল্পী মগনলাল দাহিয়া একটি ছোট্ট মেয়ের ছবি ডিজাইন করেছিলেন যার চোখ ছিল অভিব্যক্তিপূর্ণ এবং চুল ছাঁট ছিল সাধারণ। শিশুটি কোনও মডেল ছিল না, ছিল এক চিত্রকরের আঁকা ছবি। সেই শিশুটিই0 প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিশ্বাস এবং পরিচিতির প্রতীক হয়ে ওঠে। বছরের পর বছর ধরে পার্লে তাদের বিস্কুটের প্যাকেজিংয়ে কোনও পরিবর্তন আনেনি।

২০১১ সালের নিলসেন রিপোর্ট অনুযায়ী, পার্লে-জি বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত বিস্কুট হয়ে ওঠে। ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং বাজারের পরিবর্তনের মুখেও পার্লে বিস্কুটের দাম সহজলভ্য রেখেছে। এখনও গ্রামীণ ভারতের অনেক জায়গায় মাত্র ৫ টাকায় পাওয়া যায়।

পার্লে শুধু বিস্কুট তৈরিতেই থেমে থাকেনি। আশির দশকে কোকাকোলা ভারত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর, পার্ল এই শূন্যস্থান পূরণে এগিয়ে আসে। থামস আপ, লিমকা, গোল্ড স্পট এবং ফ্রুটির মতো ঠান্ডা পানীয় ব্র্যান্ড চালু করে। এই পানীয়গুলি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং অবশেষে ভারতীয় বাজারে কোকা-কোলাকে ফিরে আসতে বাধ্য করে। এই পদক্ষেপের পরিণাম কোকা-কোলা থামস আপ অধিগ্রহণ করে।

তাহলে আজও কেন পার্লে-জি প্রাসঙ্গিক? তিনটি সহজ কারণ, কম দাম, একই রকম স্বাদ এবং কয়েক দশক ধরে এটি ভারতীয় মননে বসে গিয়েছে। শৈশবের টিফিন বাক্স এবং চায়ের কাপের পার্লে-জি সর্বত্র বিরাজমান।