পুকুর, খাল-নালার জলে সবুজ কার্পেটের মতো ছেয়ে থাকে কচুরিপানা। একসময় পশ্চিমবঙ্গে শৌখিনভাবে চাষ হলেও আজ ‘বঙ্গের সন্ত্রাস’ নামে পরিচিত। কারণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এই গাছ নদী ও পুকুরের স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করে, অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি করে এবং জলজ প্রাণীর ওপর বিপর্যয় ডেকে আনে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেখানে কচুরিপানার জন্মাতে শুরু করে সেখানে মাছ সহ নানা জলজ প্রাণী ধ্বংসের মুখে পড়ে। ফলে একে পরিবেশবিদরা জলজ বাস্তুতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে আখ্যা দেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, যতই ক্ষতিকর হোক না কেন, কচুরিপানায় রয়েছে একাধিক স্বাস্থ্যকর দিক। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী, এই উদ্ভিদে রয়েছে অজানা সব ওষধি গুণ, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।

কচুরিপানার পাতায় অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে, যা দেহকে বার্ধক্যের ছাপ কমাতে সহায়তা করে। এমনকী অ্যান্টি-ক্যানসার গুণও রয়েছে বলে মনে করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখে এবং রক্তনালীর সুস্থতায় ভূমিকা রাখে।

আরও পড়ুনঃ মাইগ্রেনের অসহ্য যন্ত্রণা? প্লেটের এই খাবারগুলিই ডেকে আনছে বিপদ

গুরুতর রোগের চিকিৎসায় সহায়ক কচুরিপানা। আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কচুরিপানা উচ্চ রক্তচাপ, বাত, ব্রঙ্কাইটিস, দাঁতের ব্যথা, প্রস্রাবজনিত অসুখ ও স্কার্ভির মতো রোগ নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এর ফল বা বীজ হজমের সমস্যার সমাধান করে। ডায়রিয়া ও গ্যাস কমাতে এর উপকারিতা দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত।

কোলেস্টেরল ও সংক্রমণ প্রতিরোধে ভূমিকা রয়েছে কচুরিপানার। শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতেও এটি কার্যকর হতে পারে। গলা ব্যথা, ফোলা বা সংক্রমণের ক্ষেত্রে এর পাতার ক্বাথ পান করলে আরাম মেলে।

যৌনরোগ ও ত্বকের চিকিৎসাতেও কচুরিপানার ব্যবহার রয়েছে। ইতিহাসে উল্লেখ আছে, আগে কচুরিপানা যৌনবাহিত রোগের চিকিৎসাতেও ব্যবহৃত হয়েছে। এর পাতা শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে শক্তি জোগায়। আবার শুকিয়ে ছাই করে ত্বকে লাগালে নানা চর্মরোগে উপশম পাওয়া যায়। সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকেও এর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট গুণ সুরক্ষা দেয়।

কাজুবাদামের চেয়েও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ কচুরিপানা। সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হল, গবেষকরা দাবি করেছেন যে কচুরিপানায় পুষ্টিগুণ কাজুবাদাম বা কাঠবাদামের চেয়েও বেশি। এতে থাকা ভিটামিন ও খনিজ উপাদান দেহকে শক্তিশালী রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

পরিবেশের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনলেও, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় কচুরিপানায় আজও ‘প্রকৃতির ওষুধি ভাণ্ডার’ হিসেবে দেখা হয়। তবে যে কোনও ভেষজের মতো এটিও ব্যবহারের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা।