আজকালম ওয়েবডেস্ক: গণমাধ্যম ও গবেষণায় বারবার উঠে আসছে যে ডেটিং অ্যাপের দাপটে সম্পর্কের ধরনে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু সেই ডিজিটাল আধিপত্যের মাঝেই নতুন করে দেখা দিচ্ছে অফলাইনে পরিচয় ও আকর্ষণের প্রতি আগ্রহ। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এমনই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন এক তরুণী, যিনি দাবি করেছেন—যখন পরিচয় মুখোমুখি হয়, তখন যে স্পার্ক তৈরি হয়, তা কোনও অ্যাপেই মিলতে পারে না।
তরুণীর বর্ণনা অনুযায়ী, দশ বছর আগে এক গরমের দিনে ছাদের দুই প্রান্তে রোদ পোহাতে গিয়েই তাঁর সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় প্রতিবেশী প্যাট্রিকের (ছদ্মনাম)। দূর থেকে চোখাচোখি, তারপর হেলে–দুলে আসা ‘হাই-হ্যালো’ আর একটি প্রতিবেশীসুলভ বিয়ারের আমন্ত্রণ—সেখান থেকেই আলাপ ঘনীভূত হয়। বহুদিন পর এক সন্ধ্যায় আবার যোগাযোগ হতেই অপ্রত্যাশিতভাবে ঘনিষ্ঠতায় পৌঁছোন দুইজন। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন, যদি কেউ তাঁকে সকালবেলা বলতেন যে রাতে তিনি সামনের বাড়ির মানুষের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটাবেন, তাহলে তিনি বিশ্বাসই করতেন না।
তরুণী জানান, টিন্ডারের মতো অ্যাপে তিনি আগেও সম্পর্ক তৈরি করেছেন। এমনকি তাঁর শেষ দুই প্রেমের সম্পর্কও শুরু হয়েছিল অনলাইনে। কিন্তু তাঁর মতে, অনলাইন কথোপকথনে কখনও বোঝা যায় না বাস্তবে দেখা হলে আদৌ কোনও আকর্ষণ তৈরি হবে কিনা। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি বহু মানুষের কাছেই শুনছেন যে তারা অ্যাপ ক্লান্তিতে ভুগছেন এবং চান বাস্তব জীবনে কাউকে চিনতে। তাঁর ভাষায়—মানুষের সঙ্গে স্ক্রিনের বদলে চোখে চোখ রেখে কথা বলার আনন্দটাই অন্য রকম।
তিনি আরও মনে করিয়ে দেন যে অফলাইনে আকস্মিকভাবে তৈরি হওয়া সংযোগ অনেক সময়ই স্মরণীয় হয়ে থাকে। একটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে তিনি পরিচিত হন ক্যাডেনের (ছদ্মনাম) সঙ্গে। একই টেবিলে বসে কথা বলা, মৃদু টান, অনুষ্ঠানের জুড়ে চোখাচোখি আর পরে আফটার-পার্টিতে ঘনিষ্ঠ আলাপ—সব মিলিয়ে সেই রাতের অভিজ্ঞতা যে কোনও অ্যাপ-সংযোগের চেয়ে তীব্র ছিল, তা স্পষ্ট করে জানান তিনি। তাঁর মতে, দীর্ঘ সময় ধরে তৈরি হওয়া উত্তেজনা ও ইশারায় ইঙ্গিতপূর্ণ আকর্ষণ কোনও অ্যাপের মাধ্যমে সম্ভব নয়।
এর পাশাপাশি তিনি জানান আরও কয়েকটি অভিজ্ঞতার কথা—উৎসবে একজন নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে চোখাচোখিতে নম্বর বিনিময়, বারে বসে এক তরুণের কাছে ছোট্ট নোট পাঠিয়ে আলাপ শুরু, অথবা ক্যাসিনো থেকে বেরোনোর পথে একটি ট্যাক্সি ভাগ করে নিতে গিয়ে হঠাৎই নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া। অনেক সম্পর্ক শেষ হয়েছে, আবার কিছু ক্ষণস্থায়ী থেকে গেছে, কিন্তু তাঁর দাবি—কোনওটিই তাঁকে ‘যদি তখন এগোতাম?’ জাতীয় অনুতাপ বয়ে আনেনি। কারণ প্রত্যেকটি শুরু হয়েছিল বাস্তব জীবনের স্পন্টেনিয়াস পরিস্থিতি থেকে।
তাঁর মতে, ডেটিং অ্যাপ ক্লান্তির পিছনে একটি বড় কারণ হলো প্রত্যাখ্যানের ভয়। সরাসরি কাউকে পছন্দের কথা বলতে সংকোচ, ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা, বা বোকা দেখানোর ভয়েই মানুষ অ্যাপকে বেছে নেয়। কিন্তু তিনি মনে করেন, সামান্য অস্বস্তির সেই মুহূর্তগুলোই কখনও গভীর সম্পর্ক বা তীব্র অভিজ্ঞতার শুরু হতে পারে।
মহিলাদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা—নিজেদের পছন্দের মানুষকে এগিয়ে এসে কথোপকথন শুরু করার দুঃসাহস অর্জন করা প্রয়োজন। আর পুরুষদের প্রতি তাঁর পরামর্শ—সম্মান বজায় রেখে পরিস্থিতি বোঝা, এবং কোনও মহিলা ‘না’ বললে তা মেনে নেওয়া। তাঁর মতে, বাস্তব জগতে আলাপ শুরু করার এই সহজ মানবিক ইচ্ছাশক্তিই নতুন সম্পর্কের পথ খুলে দিতে পারে। ডিজিটাল যুগে তাই আবারও গুরুত্ব পাচ্ছে মুখোমুখি স্পর্শ, চোখাচোখি, আর হঠাৎ তৈরি হওয়া অদ্ভুত তীব্র আকর্ষণের মুহূর্তগুলো।
