আজকাল ওয়েবডেস্ক: আবার চিতাবাঘের আতঙ্ক গুজরাটের আমরেলিতে। রবিবার সকালে জেলার ধারি মহকুমার গোপালগ্রাম গ্রামে চিতাবাঘের হামলায় মৃত্যু হল এক পাঁচ বছর বয়সি শিশুর। মৃত শিশুটি এক খেতমজুরের সন্তান বলে বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। ঘাতক চিতাটিকে ধরতে ইতিমধ্যেই এলাকায় তিনটি খাঁচা বসানো হয়েছে। ফুটফুটে সন্তানহারা পরিবার এই ঘটনার পর স্তব্ধ।
বন দপ্তর সূত্রে খবর, রবিবার সকাল ৯টা নাগাদ মায়ের পিছন পিছন হাঁটছিল খুদে সাহিল কাটারা। সেই সময় ঝোপের আড়ালে ওত পেতে থাকা চিতাবাঘটি আচমকা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। চোখের নিমেষে শিশুটিকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী একটি খামারের দিকে। গুরুতর জখম অবস্থায় সাহিলকে উদ্ধার করে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি৷ সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ইন-চার্জ অ্যাসিস্ট্যান্ট কনজারভেটর অফ ফরেস্টস প্রতাপ চান্দু জানিয়েছেন, "চিতাবাঘটিকে খাঁচাবন্দি করার সবরকম চেষ্টা বর্তমানে চালানো হচ্ছে। বনকর্মীদের একটি দল এলাকাটি চষে ফেলছেন।"
উল্লেখ্য, এই এলাকায় বন্যপ্রাণীর হামলা নতুন কিছু নয়। গত ২৮ নভেম্বর এই আমরেলি জেলারই ডালখানিয়া রেঞ্জে এক বছর বয়সি এক শিশুকন্যাকে একইভাবে তুলে নিয়ে গিয়ে মারে একটি চিতাবাঘ। বারবার এমন প্রাণহানির ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অপরদিকে, উত্তরপ্রদেশের বিজনোর আফজলগড় এলাকার ভিখ্কাওয়ালা গ্রামে ঘটে আরেকটি ভয়াবহ ঘটনা। ৩৫ বছর বয়সী পুনম নামে এক যুবতী খেতে কাজ করার সময় আচমকা একটি চিতাবাঘ তাঁর ওপর হামলা চালায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, চিতাবাঘটি পুনমকে হত্যার পর তার কাঁধের কিছু অংশ ছিঁড়ে খেয়ে ফেলে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। আমানগড় টাইগার রিজার্ভের ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার অঙ্কিতা কিশোর জানান, নিহত যুবতীর দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে।
এই দুটি ঘটনার পর থেকেই সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বনবিভাগ এলাকাগুলিতে ইতিমধ্যেই কড়া নজরদারি বাড়িয়েছে। পাশাপাশি চিতাবাঘ ধরতে ফাঁদ পাতা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে এই ধরনের প্রাণঘাতী ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে এখনই জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মানুষ ও বন্যপ্রাণীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাত এখন একটি জ্বলন্ত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বনাঞ্চলের আশেপাশে বসবাসরত সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত চিতাবাঘ, বাঘ, হাতির মতো বন্যপ্রাণীর হামলার মুখে পড়ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বনভূমি সংকুচিত হওয়া, খাদ্যের অভাব এবং মানুষের অনুপ্রবেশের কারণেই বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এ অবস্থায় প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনা, বন সংরক্ষণ এবং বন্যপ্রাণী ও মানুষের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত করার।
স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশাসনের প্রতি দাবি তুলেছেন, নিয়মিত টহল, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা, ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়ন না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। এ ঘটনায় দুইটি পরিবার শোকাহত, আর সমাজ পেল এক অমূল্য বার্তা-বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে সহাবস্থান করতে হলে চাই সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ।
