আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাসের ভিড়ে পাশের যাত্রীর ফিসফিসানি, কিংবা অফিসের ক্যান্টিনে সহকর্মীদের নিচু গলার আলোচনা- কান পেতে শোনার লোভ সামলানো অনেক সময়ই কঠিন হয়ে পড়ে। বেশিরভাগ মানুষই কৌতূহলবশত এই কাজ করেন। কিন্তু এমনও অনেকে আছেন যাঁদের কাছে আড়ি পাতা বা লুকিয়ে অন্যের কথা শোনা একটি নিয়মিত অভ্যাস। মনোবিদদের মতে, এই আপাত নিরীহ (বা কারও মতে নিন্দনীয়) অভ্যাসটির আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে মানুষের একাধিক গভীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং মানসিক জটিলতার ইঙ্গিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, লুকিয়ে কথা শোনার অভ্যাসের নেপথ্যে সবচেয়ে সাধারণ কারণটি হল অদম্য কৌতূহল। অন্যের ব্যক্তিগত জীবনে কী ঘটছে, কে কাকে নিয়ে কী বলছে- এইসব জানার এক সহজাত প্রবৃত্তি অনেকের মধ্যেই কাজ করে। এই ধরনের ব্যক্তিরা সাধারণত পরচর্চায় অংশ নিতে ভালবাসেন এবং অন্যের গোপন কথা জেনে গিয়ে নিজেদের সামাজিক বৃত্তে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার চেষ্টা করেন। তাঁদের কাছে অন্যের ব্যক্তিগত তথ্য এক ধরনের সামাজিক পুঁজি, যা ব্যবহার করে তাঁরা অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চান।
তবে মনোবিদরা এই অভ্যাসের পিছনে আরও গভীর কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম হল নিরাপত্তাহীনতা বা হীনম্মন্যতা। যে ব্যক্তি নিজের যোগ্যতা বা অবস্থান নিয়ে সন্দিহান, তিনি প্রায়শই অন্যরা তাঁকে নিয়ে কী ভাবছে বা কী বলছে, তা জানতে উদগ্রীব থাকেন। অন্যের কথায় নিজের সম্পর্কে কোনও ইতিবাচক বা নেতিবাচক ধারণা খুঁজে পাওয়াই তাঁর মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়। এই নিরাপত্তাহীনতা থেকেই জন্মায় গভীর অবিশ্বাস। তাঁরা সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে পারেন না এবং সর্বদা মনে করেন যে, তাঁদের নিয়ে কোনও ষড়যন্ত্র চলছে বা তাঁদের আড়ালে কিছু কথা হচ্ছে। আড়ি পেতে তাঁরা সেই ‘সত্যি’ উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করেন।
এর পাশাপাশি, অন্যের উপর কর্তৃত্ব ফলানোর ইচ্ছাও এই অভ্যাসের একটি বড় কারণ হতে পারে। তথ্যই শক্তি- এই মন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষেরা মনে করেন, অন্যের ব্যক্তিগত বা গোপন কথা জানতে পারলে পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। তাঁরা এই তথ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে অন্যকে দুর্বল করে দেওয়া বা নিজের স্বার্থসিদ্ধি করার সুযোগ খোঁজেন। অফিসের রাজনীতিতে বা পারিবারিক সম্পর্কে এই ধরনের প্রবণতা প্রায়শই দেখা যায়। এঁরা অন্যের দুর্বলতা জেনে নিয়ে মানসিক ভাবে এক ধরনের আধিপত্য কায়েম করে আনন্দ পান।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে
এছাড়াও, যাঁরা একাকিত্ব বা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করেন, তাঁদের মধ্যেও এই প্রবণতা দেখা যায়। কোনও দল বা গোষ্ঠীর আলোচনার অংশ হতে না পেরে, তাঁরা দূর থেকে কথা শুনেই সেই আলোচনার ‘অংশ’ হয়ে ওঠার এক কাল্পনিক সুখ অনুভব করেন। এতে তাঁদের বিচ্ছিন্নতাবোধ সাময়িকভাবে প্রশমিত হয়।
সুতরাং, লুকিয়ে কথা শোনার অভ্যাসকে শুধুমাত্র একটি ‘বদভ্যাস’ বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এর গভীরে লুকিয়ে থাকতে পারে কৌতূহল, নিরাপত্তাহীনতা, অবিশ্বাস, কর্তৃত্বকামী মনোভাব এবং একাকিত্বের মতো একাধিক মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা, যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির চরিত্র সম্পর্কে অনেক কথাই বলে দেয়।
