নির্ধারিত সীমার বেশি হতে পারবে না ওজন, বাড়তে পারবে না কোমরের সাইজ। হলেই হস্তক্ষেপ করবে রাষ্ট্র! হ্যাঁ, অদ্ভুত লাগলেও এমনটা ঘটে বাস্তবে। যেখানে অধিকাংশ জায়গা ভুঁড়ি বৃদ্ধি পাওয়া, হুহু করে ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত হয় না আম-আদমি, সেখানে একটা দেশ তার নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিয়ে এতটা ভাবে! কোন দেশে ঘটে এমনটা জানেন? সূর্যোদয়ের দেশ, জাপান। 

অধিকাংশ জায়গায় কোনও রোগ হওয়ার পর তার চিকিৎসা হয়, কিন্তু জাপান রোগ হওয়ার আগে থেকেই চিকিৎসা শুরু করে, কড়া নজরদারিতে রাখে নাগরিকদের স্বাস্থ্য। 

জাপানের মেটাবো আইন সেই দেশের প্রতিটি সাবালক নাগরিকের কোমরের সাইজ নজরদারিতে রাখে, ওজন নয় ঠিক, তবে ভিসেরাল ফ্যাট কতটা বাড়ল সেটার উপর নজরদারি চালায়। কোমরের মাপ বাড়লেই পড়তে হয় প্রশাসনের নজরে। পুরুষদের ক্ষেত্রে কোমরের সাইজ যদি ৮৫ সেন্টিমিটার এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৯০ সেন্টিমিটারের বেশি হয় তাহলে তৎক্ষণাৎ তাঁদের জীবনযাপনের কাউন্সেলিং শুরু হয়ে যায়। চলতে থাকে ফলো আপ, হেলথ কোচিং। না, এর জন্য কোনও ফাইন দিতে হয় না। পেতে হয় না কোনও শাস্তিও। আর এই আইনের কারণেই জাপানে ওবেসিটির হার গোটা পৃথিবীতে সবথেকে কম, মাত্র ৪ শতাংশ। এমনকী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বিশ্বের মধ্যে সবথেকে কম। অন্যান্য সমস্ত দেশের তুলনায় সুস্থভাবে বেঁচে থাকার হার এবং আয়ুষ্কাল অনেক বেশি। 

এই আইন সাবালকদের জন্য হলেও, তা মূলত কড়াকড়িভাবে মানা হয় ৪০-৭০ বছর বয়সীদের জন্য। ২০০৮ সালে লাগু করা হয় এই আইন। জাপানের নাগরিকদের প্রতি বছর অন্তত একবার করে চেকআপ করাতেই হয়। সেই সময় সামান্য হেরফের দেখা গেলেও কড়াকড়ি শুরু হয়ে যায়। সেই নাগরিকের জীবনধারায় বদল আনা হয়। নেওয়া হয় প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ। এই আইন মূলত মেটাবলিক সিন্ড্রোম রোধ করার জন্যই বানানো হয়েছে।

জাপানিরা যে দারুণ ডায়েট মেনে চলেন সেটা নয়। তাঁরা মেটাবলিক সমস্যাকে একদম প্রাথমিক স্টেজেই চিহ্নিত করে, সেটার মোকাবিলা করেন। অনেকেই এটিকে 'বডি পলিসিং' বলেন, কিন্তু জাপানের মতে রোগ হওয়ার আগেই তাকে প্রতিরোধ করার অর্থ কম হয়রানি, চিকিৎসার পিছনে কম খরচ, এবং বর্ধিত আয়ুষ্কাল।