নেই কোনও কষ্টবোধ, কেটে-ছড়ে গেলে, রক্তে বেরোলেও যন্ত্রণা হয় না, ব্যথা লাগে না তার। ভাবছেন, যাহ এমন আবার হয় নাকি? হয়। কেবল এতটুকুই নয়। এই মেয়েটি ঘুমায় না। কখনও অসুস্থও হয় না। এই বিস্ময় বালিকা বিজ্ঞানকে যেন চমকে দিয়েছে। কিন্তু কে এই বিস্ময় বালিকা? 

এই বিস্ময় বালিকা ইংল্যান্ডের বাসিন্দা। নাম অলিভিয়া ফার্নসওয়ার্থ। তাঁকে অনেক সময়ই বায়োনিক গার্লও বলা হয়ে থাকে তাঁর এই অদ্ভুত গুণের জন্য। জানা যায়, একবার একটি ভয়ানক গাড়ি দুর্ঘটনার হাত থেকেও সুস্থ হয়ে বেঁচে ফেরে সে। তাও কোনও ব্যথা, যন্ত্রণা ছাড়াই।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন অলিভিয়ার কেসটি একটি বিরল এবং অদ্ভুত কেস। কোনও ধরনের রোগ তাঁকে ছুঁতে পর্যন্ত পারবে না। শারীরিকভাবে কোনও ব্যথা, বেদনা হয় না তাঁর। ঘুমান না। ঘুমালেও নামমাত্র সময়ের জন্য। যে কোনও ধরনের সংক্রমণ এবং অসুখকে প্রতিরোধ করতে পারে তাঁর শরীর। কিন্তু কেন এমনটা ঘটে? 
অলিভিয়া ফার্নসওয়ার্থের কথা শুনে মনে হচ্ছে, ইস, আমারও যদি এমনটা হতো! আমিও যদি রোগ বালাইয়ের হাত থেকে দূরে থাকতে পারতাম, যন্ত্রণাবোধ থাকত না, কী ভালই না হতো! কিন্তু এসব ভাবার আগে, জানেন কি কেন তিনি বাকি সবার থেকে আলাদা? এই মেয়েটি এক বিরল জেনেটিক ডিসঅর্ডারে ভুগছে। সেটির নাম ক্রোমোজোম ৬ ডিলিটেশন। এই জেনেটিক অসুস্থতার কারণে কোনও ব্যথা, বেদনা অনুভূত হয় না, খিদে পায় না, ঘুম পায় না। এমনকী বিপদ আসছে বা হতে পারে সেটাও তিনি বুঝতে পারেন না। এমনকী, কিছু ক্ষেত্রে অলিভিয়া না বুঝে নিজেই নিজেকে আঘাত করে ফেলেন, হাত-পা কেটে ফেলেন। কিন্তু সেসব উপলব্ধি করতে পারেন না তিনি।

বর্তমানে এই অলিভিয়া ফার্নসওয়ার্থের কেস নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বোঝার চেষ্টা করছেন কষ্ট, যন্ত্রণা, ক্লান্তি, খিদে পাওয়ার মতো অনুভূতিগুলোর ভিত্তি কী, কেন হয়, নেপথ্যে কী আছে। একই সঙ্গে নানা বিষয়ে চিকিৎসাও চালানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা। 

শুধু তাই নয়, ইংল্যান্ডের এই বিস্ময় বালিকা, ওরফে বায়োনিক গার্ল অলিভিয়ার কেসটি আরও এক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। যদি কিছু ক্ষেত্রে মানবদেহ এমন অদ্ভুত আচরণ করতে পারে, তাহলে না জানি তার মধ্যে আর কী কী সম্ভাবনা রয়েছে।