শীতের সময় অনেকেই অন্যদের তুলনায় বেশি ঠান্ডা অনুভব করেন। একই তাপমাত্রায় কেউ যখন স্বাভাবিক থাকেন, তখন আরেকজনের হাত-পা বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের মতে, এর পেছনে শুধু আবহাওয়াই দায়ী নয়, শরীরের কিছু বিশেষ ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতিই বেশিরভাগ সময়ে এই বাড়তি ঠান্ডা লাগার মূল কারণ। সঠিক সময়ে এগুলোর অভাব ধরা না পড়লে সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে শরীরের স্বাভাবিক তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

চিকিৎসকদের মতে, প্রথমেই যেটির ঘাটতি চোখে পড়ে তা হল ভিটামিন বি১২। এই ভিটামিন রক্তে লোহিত কণিকা তৈরিতে সাহায্য করে এবং স্নায়ুর স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখে। যখন শরীরে বি১২ কমে যায়, তখন রক্তকণিকার মান কমে যায়, ফলে টিস্যুতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না। এর ফলে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা ও শরীরে অস্বাভাবিক শীতলতা অনুভবের মতো সমস্যা দেখা দেয়।

একইসঙ্গে ফোলেট বা ভিটামিন বি৯-এর অভাবও শরীরে ঠান্ডা লাগার অন্যতম কারণ। ফোলেটও রক্ত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর ঘাটতি হলে রক্তাল্পতা তৈরি হতে পারে, যা শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে সমস্যা সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত শাকসবজি, ডাল, ডিম ইত্যাদি না খেলে এই ঘাটতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ হল আয়রন। আয়রনের ঘাটতিতে রক্তাল্পতা হয়, যার ফলে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন পায় না এবং তাপ উৎপাদন কমে যায়। আয়ুর্বেদে বলা হয়, আয়রনের ঘাটতি দেহের অভ্যন্তরীণ তাপ দুর্বল করে দেয়। ফলে মানুষ অল্প শীতেই বেশি কাঁপতে শুরু করে।

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন, প্রথমেই খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। খাদ্যতালিকায় রাখুন গাঢ় সবুজ শাক, ডাল, মাংস, মাছ, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার। শীতে আদা, দারুচিনি, গোলমরিচের মতো মশলা শরীর দ্রুত গরম করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন এক কাপ আদা-চা বা মশলা-চা দেহের অভ্যন্তরীণ তাপ বাড়াতে কার্যকর।

এছাড়া নিয়মিত হালকা যোগব্যায়াম, প্রণায়াম ও দ্রুত হাঁটা শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যা ঠান্ডা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা অনুভব দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত, কারণ এটি থাইরয়েড সমস্যা বা অন্যান্য স্বাস্থ্যজটিলতার ইঙ্গিতও হতে পারে।

শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপ ঠিক রাখতে ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি পূরণ করাই সবচেয়ে জরুরি। সময়মতো সচেতন হলে শীতেও শরীর থাকবে উষ্ণ ও সুস্থ।