আধুনিক জীবনযাপনে কমবয়সে সঙ্গী হচ্ছে বন্ধ্যাত্ব। বিশ্বজুড়ে এখন এক বড় অংশের মহিলারা বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ভুগছেন। চিকিৎসকদের মত, অনেক সময় শরীর আগেই সতর্ক সংকেত দেয় কিন্তু অবহেলার কারণে সেগুলো নজর এড়িয়ে যায়। সময়মতো সেই লক্ষণ চিনে ফেলতে পারলেই চিকিৎসায় সাফল্যের সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে কোন কোন লক্ষণ বন্ধ্যাত্বের ইঙ্গিত হতে পারে, জেনে নিন-

১. ঋতুস্রাবের অনিয়ম বা ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়াঃ স্বাভাবিক ঋতুস্রাব চক্র ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে হওয়ার কথা। কিন্তু অনেক মহিলার পিরিয়ড কখনও অনেক দেরিতে হয়, আবার কখনও একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসকদের মতে, এমন হলে শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা পিসিওএস (পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রম) থাকতে পারে, যা ডিম্বস্ফূরণে বাধা দেয়। যদি টানা দুই–তিন মাস ঋতুস্রাব না আসে বা চক্র একেবারেই অনিয়মিত হয়, তবে দ্রুত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

২. যৌন মিলনের সময় বা পরে ব্যথাঃ অনেক মহিলাই মনে করেন, এটি ‘স্বাভাবিক বিষয়’, কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, যৌন মিলনের সময় বা পরে ব্যথা গুরুতর সতর্ক সংকেত হতে পারে। যদি তীব্র ব্যথা, অস্বস্তি বা জ্বালাভাব থাকে, তবে সেটি এন্ডোমেট্রিওসিস, পেলভিক ইনফ্লেমেটরি ডিজিজ (পিআইডি) বা ফাইব্রয়েড-এর লক্ষণ হতে পারে। এটি সরাসরি গর্ভধারণ প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়।

আরও পড়ুনঃ রান্নাঘরের নিত্যসঙ্গী অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল, তারই ব্যবহারে সামান্য ভুল ডেকে আনতে পারে বড় মারাত্মক বিপদ

৩. হরমোনের ভারসাম্যহীনতাঃ শরীরের ওজন হঠাৎ বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া, অতিরিক্ত চুল পড়া বা পুরুষদের মতো মুখে রোম ওঠা, ব্রণ, ঘুমের সমস্যা-এসবই হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার লক্ষণ। ডিম্বাশয় থেকে সঠিকভাবে ডিম্বাণু তৈরি না হলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। তাই এসব পরিবর্তন দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

৪. দীর্ঘস্থায়ী পেলভিক ব্যথাঃ অনেক মহিলারই তলপেটে বা পেলভিস এলাকায় নিয়মিত হালকা ব্যথা থাকে, যা ঋতুস্রাবের সময় আরও বেড়ে যায়।বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি এন্ডোমেট্রিওসিস বা ফাইব্রয়েডের মতো রোগের ইঙ্গিত হতে পারে। এই ধরনের সমস্যা থাকলে গর্ভাশয় ও ডিম্বনালী প্রভাবিত হয়, ফলে গর্ভধারণ জটিল হয়ে পড়ে।

৫. অতিরিক্ত ওজন বা ওজন কমাতে সমস্যাঃ অতিরিক্ত স্থূলতা হরমোনের কার্যকারিতা নষ্ট করে। বিশেষ করে যেসব মহিলার পিসিওএস আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ওজন প্রজনন ক্ষমতা আরও কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে, অতিরিক্ত রোগা মহিলাদের ক্ষেত্রেও ওভুলেশন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ওজন নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৬. অস্বাভাবিক স্রাব বা সংক্রমণঃ যোনিপথে অস্বাভাবিক রঙের বা দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, নিয়মিত সংক্রমণ বা প্রদাহ থাকলে তা গর্ভনালীর সংক্রমণ বা জরায়ুর  প্রদাহের ইঙ্গিত হতে পারে। এটি দীর্ঘস্থায়ী হলে গর্ভনালী বন্ধ হয়ে গিয়ে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন বাধাগ্রস্ত হয়, যা বন্ধ্যাত্বের অন্যতম বড় কারণ।

নিয়মিত চিকিৎসা, ওজন নিয়ন্ত্রণ, স্ট্রেস কমানো ও সঠিক ডায়েট মেনে চললেই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বন্ধ্যাত্বের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।