আজকাল ওয়েবডেস্ক: বার্ধক্যকে জয় করে যৌবনে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে মানুষ। এত দিন তা ছিল কেবলই কল্পবিজ্ঞান বা রূপকথার গল্প। কিন্তু এ বার সেই স্বপ্নকে বাস্তব করার পথে এক বিরাট পদক্ষেপ করলেন বিজ্ঞানীরা। এই প্রথমবার কোষ অক্ষত রেখে তার জৈবিক ঘড়ির কাঁটা উল্টো দিকে ঘোরাতে সক্ষম হলেন তাঁরা। ‘পার্শিয়াল সেলুলার রিপ্রোগ্রামিং’ নামক এই যুগান্তকারী পদ্ধতিতে বয়স্ক কোষকে তারুণ্যে ফেরানো সম্ভব হয়েছে। যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

এই পদ্ধতির মূলে রয়েছে ‘ইয়ামানাকা ফ্যাক্টরস’ (Oct4, Sox2, Klf4, Myc বা OSKM) নামে পরিচিত চারটি প্রোটিন। এই প্রোটিন বা ফ্যাক্টরগুলি কোষের উপর এমনভাবে কাজ করে, যাতে কোষটি বার্ধক্যের ছাপগুলি মুছে ফেলে তরুণ অবস্থায় ফিরে যায়। তবে এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ রিপ্রোগ্রামিং-এর থেকে আলাদা। সম্পূর্ণ রিপ্রোগ্রামিং পদ্ধতিতে কোষ তার নিজস্ব পরিচয় হারিয়ে একটি অপরিণত ‘প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেলে’ পরিণত হয়। অর্থাৎ চোখের কোষ হোক বা কিডনির কোষ, দুই’ই স্টেম সেলে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু নতুন এই আংশিক রূপান্তর পদ্ধতিতে কোষ তার নিজস্ব পরিচয় ও কার্যকারিতা বজায় রেখেই নবযৌবন লাভ করে। সহজ কথায়, পুরনো বাড়িকে ভেঙে নতুন করে গড়া নয়, বরং দক্ষতার সঙ্গে মেরামত করে তাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার মতোই এই প্রক্রিয়া।

এই গবেষণার সবচেয়ে বড় প্রমাণ মিলেছে এক যুগান্তকারী পরীক্ষায়। বিজ্ঞানীরা বয়স্ক ইঁদুরের বার্ধক্য ও গ্লুকোমা জনিত দৃষ্টিশক্তি হ্রাসকে প্রতিহত করতে সফল হয়েছেন। আংশিক রিপ্রোগ্রামিং পদ্ধতির প্রয়োগে তাদের চোখের ক্ষতিগ্রস্ত রেটিনার কোষগুলি ফের যৌবন ফিরে পায় এবং মস্তিষ্কে সঙ্কেত পাঠানোর ক্ষমতা লাভ করে। ফলস্বরূপ, প্রায় অন্ধ ইঁদুরগুলির দৃষ্টিশক্তি প্রায় আগের অবস্থায় ফিরে আসে। বয়স্ক প্রাণীর দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধারের ঘটনা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এই প্রথম, যা প্রমাণ করে যে কোষের পরিচয় না মুছেও তার ‘এপিজেনেটিক ক্লক’ বা বয়সের ঘড়িকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুন: পর্ন দেখলে লিঙ্গ শিথিলতার আশঙ্কা বাড়ে? বিস্ফোরক তথ্যে চিন্তা বাড়ালেন গবেষকরা

দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধারই নয়, এই পদ্ধতির আরও অনেক সুফল মিলেছে। গবেষকেরা দেখেছেন, এটি ইঁদুরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকেও হ্রাস করতে সক্ষম। এবং এই পদ্ধতি তাদের শারীরিক কর্মক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। সল্ক ইনস্টিটিউটের গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, এই পদ্ধতি কোষের বয়সের ছাপ বা ডিএনএ মিথাইলেশন প্যাটার্নকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়, জিনের কার্যকারিতায় ভারসাম্য আনে এবং কোষের বিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, এই চিকিৎসার ফলে ইঁদুরগুলির আয়ুও অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: পর্ন দেখলে লিঙ্গ শিথিলতার আশঙ্কা বাড়ে? বিস্ফোরক তথ্যে চিন্তা বাড়ালেন গবেষকরা

চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে এই আবিষ্কার এক নতুন বিপ্লবের সূচনা করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও মানুষের উপর এর প্রয়োগ এখনও বহু দূরের পথ, তবে এই সাফল্য এমন এক ভবিষ্যতের দরজা খুলে দিল, যেখানে হয়তো বার্ধক্যজনিত রোগগুলিকে প্রতিহত করা আর কঠিন হবে না। দীর্ঘ দিন পর্যন্ত নিজের কোষ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে তরুণ রাখা সম্ভব হবে।