আজকাল ওয়েবডেস্ক: জীবন এবং মৃত্যু- এই দুই চরম সত্যের মাঝখানে কি আরও কিছু আছে? এত দিন এই প্রশ্নের উত্তর ছিল দর্শন বা আধ্যাত্মিকতার বিষয়। কিন্তু এখন একদল বিজ্ঞানী দাবি করছেন, এই দুইয়ের মাঝে রয়েছে এক তৃতীয় স্তর। এমন এক অবস্থা, যেখানে শরীরকে ঠিক ‘জীবিত’ বলা যায় না, আবার ‘মৃত’ বলেও সম্পূর্ণ দাগিয়ে দেওয়া যায় না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই নতুন ধারণা জন্ম-মৃত্যুর চিরাচরিত ধারণাকেই নাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
গবেষকদের মতে, এতদিন আমরা মৃত্যুকে একটি সুইচ অফ করার মতো ঘটনা বলে ভেবে এসেছি। অর্থাৎ, হৃদস্পন্দন থামল, শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হল এবং মস্তিষ্কের কাজ শেষ হয়ে গেল। এর মানেই জীবনের সমাপ্তি। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, মৃত্যু আসলে একটি প্রক্রিয়া, কোনও একক ঘটনা নয়। ক্লিনিক্যাল ডেথ বা চিকিৎসাগত মৃত্যুর (যখন হৃদস্পন্দন ও শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়) পরেও শরীরের কোষগুলি সঙ্গে সঙ্গে মরে যায় না। তারা আরও বেশ কিছুক্ষণ টিকে থাকে। এই সময়টুকুই হল সেই ‘ধূসর এলাকা’ বা ‘টুইলাইট জোন’, যাকে বিজ্ঞানীরা জীবন ও মৃত্যুর মাঝের তৃতীয় স্তর বলে চিহ্নিত করছেন।
আরও পড়ুন: অন্য জাতের সঙ্গে সঙ্গম, তাতে জন্মানো সন্তানরাই বদলে দিচ্ছে বংশের স্বভাব-চরিত্র! এ কী দেখলেন গবেষকরা?

কী এই তৃতীয় স্তর?
বিষয়টি বোঝাতে বিজ্ঞানীরা একটি কম্পিউটারের ‘হাইবারনেশন’ বা ‘স্ট্যান্ডবাই’ মোডের উদাহরণ দিয়েছেন। এই অবস্থায় কম্পিউটারটি চালুও নয়, আবার পুরোপুরি বন্ধও নয়। প্রয়োজন পড়লে মুহূর্তে তাকে সক্রিয় করে তোলা যায়। ঠিক সেভাবেই, ক্লিনিক্যাল মৃত্যুর পর শরীরের কোষগুলি এক ধরনের ‘সাসপেন্ডেড অ্যানিমেশন’ বা স্থগিত অবস্থায় চলে যায়। এই সময়ে তাদের বিপাক ক্রিয়া প্রায় শূন্যে নেমে আসে, কিন্তু কোষের গঠনগত কাঠামো তখনও ধ্বংস হয় না। অর্থাৎ, তখনও প্রাণ ফিরিয়ে আনার একটি ক্ষীণ সম্ভাবনা থেকে যায়। বিজ্ঞানীরা এই অবস্থাকেই বলছেন ‘অ্যানাবায়োসিস’।

এই গবেষণার মূল ভিত্তি হল, অক্সিজেনের অভাবে কোষের মৃত্যু প্রক্রিয়া। মস্তিষ্ক বা অন্যান্য অঙ্গের কোষ অক্সিজেনের অভাবে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। কিন্তু যদি কোনও উপায়ে এই কোষগুলিকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে আনা যায় বা তাদের ক্ষয় রোধ করা যায়, তবে কি জীবন ফিরিয়ে আনা সম্ভব? এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করেই এগোচ্ছে গবেষণা।
আরও পড়ুন: ৭ কোটি শুক্রাণু চাই! চাহিদা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ৫০ সঙ্গীর সঙ্গে একটানা সঙ্গম রানিমার! কোথায় থাকে এই রানি?

এর ভবিষ্যৎ কী?
এই তত্ত্ব সত্যি প্রমাণিত হলে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক যুগান্তকারী বিপ্লব আসতে পারে।
১। অঙ্গ প্রতিস্থাপন: মৃত্যুর পর অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিকে এই ‘তৃতীয় স্তরে’ অনেক বেশি সময় ধরে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। ফলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য আরও বেশি সময় পাওয়া যাবে এবং বহু মানুষের জীবন বাঁচানো সহজ হবে।
২। জরুরি চিকিৎসা: হৃদরোগে আক্রান্ত বা গুরুতর দুর্ঘটনাগ্রস্ত রোগীদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক ও অন্যান্য অঙ্গকে স্থায়ী ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হতে পারে। শরীরকে সাময়িকভাবে এই স্থগিত অবস্থায় পাঠিয়ে চিকিৎসকেরা মূল্যবান সময় পেতে পারেন।
যদিও এই গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবুও বিজ্ঞানীরা আশাবাদী। তাঁদের মতে, মৃত্যু সম্ভবত জীবনের শেষ কথা নয়, বরং একটি দীর্ঘ পথের একটি বাঁক মাত্র। জীবন আর মৃত্যুর মাঝের এই রহস্যময় জগতের পর্দা উন্মোচিত হলে মানুষের আয়ু এবং স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের ধারণাই পুরোপুরি বদলে যাবে।