সবজি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য-এ নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। কিন্তু প্রশ্ন হল, সবজি কাঁচা খাওয়া ভাল, না রান্না করে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়? এই নিয়ে অনেকের মনেই সংশয় রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রশ্নের কোনও একটি উত্তর নেই। কারণ সবজির ধরন, রান্নার পদ্ধতি এবং নির্দিষ্ট পুষ্টির গঠন-সব মিলিয়ে ফল ভিন্ন হয়।

কাঁচা সবজিতে থাকে তাপ সংবেদনশীল ভিটামিন যেমন ভিটামিন সি ও ফোলেট যেগুলি তাপে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কাঁচা অবস্থায় এগুলো শরীরে বেশি পরিমাণে পাওয়া সম্ভব। এছাড়া কাঁচা সবজিতে থাকে প্রাকৃতিক এনজাইম ও ফাইবার, যা হজমে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায়। ব্রকলি, ক্যাপসিকাম, শসা বা গাজরের মতো কিছু সবজি কাঁচা খেলে এগুলোর প্রাকৃতিক ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট বেশি সময় সক্রিয় থাকে।

রান্না মানেই সবসময় ক্ষতি নয়। বরং অনেক সময় তাপের প্রভাবে সবজির কোষের প্রাচীর ভেঙে যায়, যার ফলে কিছু পুষ্টি শরীরে আরও সহজে শোষিত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, টমেটোতে থাকা ‘লাইকোপিন’ বা গাজরের ‘বিটা-ক্যারোটিন’। এগুলি রান্নার পর শরীরে ভালভাবে কাজ করে এবং হৃদযন্ত্র ও ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রান্নার ধরনও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ সময় ধরে ফুটিয়ে রান্না করলে অনেক ভিটামিন নষ্ট হয়, কিন্তু স্টিমিং, স্যঁতে বা মাইক্রোওয়েভ পদ্ধতিতে স্বল্প সময় রান্না করলে পুষ্টি ধরে রাখা সম্ভব। রান্নার সময় যত কম জল ব্যবহার করা হয়, পুষ্টির ক্ষতি তত কম হয়।

পুষ্টিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী, কাঁচা ও রান্না করা-দুটো ধরণের সবজিই ডায়েটে থাকা উচিত। যেমন, স্যালাদে কাঁচা শসা, টমেটো ও গাজর রাখতে পারেন; আবার ভিটামিন এ বা লাইকোপিন সমৃদ্ধ সবজি হালকা রান্না করে খাওয়াই ভাল। এতে শরীর প্রয়োজনীয় সব ধরনের পুষ্টি পায়।

সবজি একেবারে কাঁচা খাওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন পুষ্টিবিদদের একাংশ। আবার শুধু রান্না করেও নয়, দুটোর ভারসাম্যই শ্রেয়। কাঁচা সবজিতে মিলবে টাটকা ভিটামিন ও এনজাইম, আর রান্না করা সবজিতে পাওয়া যাবে সহজে শোষণযোগ্য পুষ্টি। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মানে শুধু সবজি খাওয়া নয়, কীভাবে খাচ্ছেন তা জানা জরুরি।