আজকাল ওয়েবডেস্ক: সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছুটেই চলেছে মানুষ। অফিস, সংসার, নিত্যদিনের কাজের চাপে শরীর যখন একেবারে ভেঙে পড়েছে, তখন বাড়ি ফিরে এক কাপ চায়ের চেয়ে বেশি আরামদায়ক আর কী কিছু আছে? আছে।
এক বালতি ঈষদুষ্ণ জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকার অভ্যাসটিকে অনেকেই হয়তো সেকেলে বা নিছক আরামের উপায় বলে মনে করেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এটি কেবল আরামই দেয় না, এর নেপথ্যে রয়েছে শরীর ও মনকে তরতাজা করে তোলার বিশেষ ক্ষমতা।
সারাদিন ধরে আমাদের শরীরের সমস্ত ভার বহন করে পা দু’টি। হাঁটাচলা, দাঁড়িয়ে থাকা বা দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে থাকার ফলে পায়ের পেশিগুলি ক্লান্ত ও শক্ত হয়ে যায়। এর ফলে রক্ত সঞ্চালনও খানিকটা ব্যাহত হয়। দিন শেষে যখন আপনি গরম জলে পা ডোবান, তখন ঘটে এক আশ্চর্য ঘটনা। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘থার্মোথেরাপি’।
আরও পড়ুন: অন্য জাতের সঙ্গে সঙ্গম, তাতে জন্মানো সন্তানরাই বদলে দিচ্ছে বংশের স্বভাব-চরিত্র! এ কী দেখলেন গবেষকরা?
কীভাবে কাজ করে এই পদ্ধতি?
গরম জলের উষ্ণতা পায়ের রক্তনালীগুলিকে প্রসারিত করে, যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় ‘ভ্যাসোডায়ালেশন’ বলা হয়। এর ফলে পায়ে রক্ত সঞ্চালন দ্রুত এবং মসৃণ হয়। বর্ধিত রক্তপ্রবাহ সারাদিনের কাজের ফলে পেশিতে জমে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিডের মতো বর্জ্য পদার্থগুলিকে সরিয়ে দিতে সাহায্য করে। এই পদার্থগুলিই মূলত ক্লান্তি এবং ব্যথার জন্য দায়ী। ফলস্বরূপ, পায়ের পেশিগুলি শিথিল হয় এবং নিমেষে আরাম অনুভূত হয়।
শুধু শারীরিক ক্লান্তিই নয়, মানসিক স্বস্তি আনতেও এই পদ্ধতির জুড়ি মেলা ভার। আমাদের পায়ে রয়েছে হাজার হাজার স্নায়ুপ্রান্ত। গরম জলের স্পর্শ এই স্নায়ুগুলিকে শান্ত করে এবং মস্তিষ্কে স্বস্তিদায়ক বার্তা পাঠায়। এতে কর্টিসলের মতো ‘স্ট্রেস হরমোন’-এর ক্ষরণ কমে এবং মানসিক চাপ ও উদ্বেগ দূর হয়। দিনের শেষে মাত্র ১৫-২০ মিনিট এই ভাবে বসলে মন শান্ত হয় এবং মেজাজ ফুরফুরে হয়ে ওঠে।
সুনিদ্রা: যাঁরা অনিদ্রার সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের জন্য এই অভ্যাস অত্যন্ত উপকারী। গরম জলে পা ডুবিয়ে রাখলে শরীরের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পায় এবং পরে তা স্বাভাবিক নিয়মে শীতল হয়। তাপমাত্রার এই পরিবর্তন শরীরকে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।
ব্যথা উপশম: বাতের ব্যথা, গোড়ালির যন্ত্রণা বা পায়ে অন্য কোনও হালকা চোট থাকলেও গরম জলের সেঁক দারুণ কাজ দেয়। এটি পেশি এবং গাঁটের স্টিফনেস কাটিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: ৭ কোটি শুক্রাণু চাই! চাহিদা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ৫০ সঙ্গীর সঙ্গে একটানা সঙ্গম রানিমার! কোথায় থাকে এই রানি?
ত্বকের যত্ন: এই অভ্যাস পায়ের ত্বককে নরম রাখে। জলে সামান্য নুন বা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিলে তা পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতে এবং ত্বককে মসৃণ রাখতেও সাহায্য করে।
অতএব, যখন দিন শেষে ক্লান্তিতে শরীর আর চলবে না, তখন দামি কোনও স্পা বা মাসাজের কথা না ভেবে এক বালতি গরম জল নিয়ে পা ডুবিয়ে বসুন। এই ঘরোয়া অভ্যাসই আপনার শরীর ও মনকে নতুন করে চাঙ্গা করে তোলার জন্য যথেষ্ট।
