বর্তমান সময়ে শিশুকে স্মার্টফোন দেওয়া অনেক পরিবারের কাছে স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনলাইন ক্লাস, বিনোদন কিংবা ব্যস্ত অভিভাবকদের সাময়িক স্বস্তি-সব মিলিয়েই ছোটদের হাতে খুব কম বয়সেই ফোন চলে যাচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক এক আন্তর্জাতিক গবেষণা বলছে, এই তাড়াহুড়ো ভবিষ্যতে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে রয়েছে সিএইচওপি অর্থাৎ চিল্ড্রেন’স হসপিটাল অফ ফিলাডেলফিয়া ইউসি বার্কলে এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষকদের দাবি, শিশুকে যদি ১২ বছরের আগে স্মার্টফোন দেওয়া হয়, তাহলে তার মধ্যে ডিপ্রেশন, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এবং ঘুমের সমস্যার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, ১২ বছর বয়সেই যারা প্রথম স্মার্টফোন পেয়েছিল তাদের মধ্যে বিষণ্ণতার ঝুঁকি প্রায় ৩০% বেশি, ওবেসিটি বা মোটা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৪০% বেশি এবং ঘুমের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি প্রায় ৬০% বেশি থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর অন্যতম কারণ হল অনিয়ন্ত্রিত স্ক্রিন টাইম। শিশুরা যত ছোট থাকে, ততই তারা নিয়ম মানতে পারে না। ফলে দীর্ঘ সময় সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও বা গেমে ডুবে থাকে। এর ফলে শারীরিক নড়াচড়া কমে যায়, শরীরে চর্বি বাড়ে এবং মানসিক চাপও বৃদ্ধি পায়।
আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে ঘুমের ব্যাঘাত। রাতে ঘুমানোর আগে বা বিছানায় ফোন ব্যবহার করলে ব্লু-লাইটের কারণে মেলাটোনিন নিঃসরণ কমে যায়। এতে গভীর ঘুম নষ্ট হয়, সকালে ক্লান্তি আসে, মনোযোগ ভেঙে যায়-যা ধীরে ধীরে মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে।
শুধু তাই নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় অবাঞ্ছিত বিষয়, তুলনা, লাইক-শেয়ার-ভিউয়ের মানসিক চাপ, সাইবারবুলিং—এসবই ছোট বয়সে শিশুর মনে নেতিবাচক ছাপ ফেলে। সামাজিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা কমে যেতে পারে।গবেষণাটি অভিভাবকদের উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। যা হল-
*১২ বছরের আগে স্মার্টফোন দেওয়া এড়িয়ে চলুন।
*প্রথমে প্রয়োজনে সাধারণ ফিচার ফোন দিন।
*স্ক্রিন-টাইম নিয়ন্ত্রণ করুন, বিশেষ করে রাতে ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করুন।
*শিশুদের বাইরে খেলা, বই পড়া এবং অফলাইন সামাজিক আদান-প্রদান বাড়াতে উৎসাহ দিন।
গবেষকরা বলছেন, স্মার্টফোন খারাপ নয়, কিন্তু বয়সের আগে এর ব্যবহার শিশুর ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অভিভাবকদের সতর্ক হওয়া জরুরি।
