দক্ষিণ কোরিয়া এমন একটি প্যাচ তৈরি করেছে যা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দাঁত পুনরায় গজাতে সক্ষম — অর্থাৎ ভবিষ্যতে ডেনচার বা কৃত্রিম দাঁতের প্রয়োজনই হয়তো আর থাকবে না।
সিওল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা একটি মাইক্রোনিডল প্যাচ উদ্ভাবন করেছেন, যা লুকিয়ে থাকা দাঁতের স্টেম সেলকে সক্রিয় করে এনামেল পুনর্গঠন করতে পারে এবং এমনকি সম্পূর্ণ নতুন দাঁতও গজাতে সক্ষম। প্যাচটিতে রয়েছে ‘টাইডেগ্লুসিব’ নামে একটি ওষুধ, যা গ্রোথ ফ্যাক্টরের সঙ্গে মিলে হাড়ে থাকা ডেন্টাল স্টেম সেলকে জাগিয়ে তোলে।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যে ফল পাওয়া গিয়েছে:
ছোট ক্যাভিটি ৪–৬ সপ্তাহের মধ্যেই পুরোপুরি সেরে গিয়েছে
ভাঙা বা চিপড দাঁতে ৮ সপ্তাহে নতুন এনামেল তৈরি হয়েছে
৩০% অংশগ্রহণকারীর ক্ষেত্রে নতুন দাঁতের বাড গঠনের লক্ষণ দেখা গিয়েছে
কোনও ব্যথা নেই, ড্রিলিং নেই, ফিলিং নেই
কীভাবে কাজ করে প্যাচটি?
ক্ষতিগ্রস্ত দাঁতের উপরের মাড়িতে প্রতিদিন মাত্র ২০ মিনিট প্যাচটি লাগাতে হয়। মাইক্রোনিডল বা সূক্ষ্ম সূঁচ ব্যথাহীনভাবে মাড়ি ভেদ করে ওষুধকে দাঁতের রুটের কাছে পৌঁছে দেয়, যেখানে স্টেম সেল অবস্থান করে। টাইডেগ্লুসিব একটি প্রোটিন (GSK-3) কে নিষ্ক্রিয় করে, যে প্রোটিন সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের দাঁত পুনর্গজানোকে বাধা দেয়।
এর ফলে দন্তচিকিৎসায় বিপ্লব ঘটতে পারে:
বিশ্বজুড়ে ৩.৫ বিলিয়ন মানুষ ওরাল ডিজিজে ভোগেন
ডেন্টাল ট্যুরিজম শিল্পের পরিমাণ বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার
ইমপ্লান্ট বা ডেনচারের খরচ ১০,০০০–৪০,০০০ ডলার পর্যন্ত
কিন্তু পুনর্গজানো দাঁত সম্পূর্ণ আপনার নিজের—কোনও রিজেকশনের ঝুঁকি নেই
দক্ষিণ কোরিয়া ২০২৬ সালের মধ্যেই এই প্যাচ বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে। প্রতিটি দাঁতের জন্য দাম ধরা হতে পারে প্রায় ৩০০ ডলার—ইমপ্লান্টের তুলনায় অনেক কম। একই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে শরীরের অন্যান্য হাড় পুনর্গঠনের কাজেও ব্যবহার হতে পারে।
এই গবেষণা দাঁতের চিকিৎসা-জগতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীদের এই মাইক্রোনিডল প্যাচ যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসে, তবে ভবিষ্যতে দাঁত ভাঙা, ক্ষয়, রুট ক্যানাল বা ডেন্টারের মতো প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োজন অনেকটাই কমে যেতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, নিজের শরীরের স্টেম সেল ব্যবহার করে স্বাভাবিক দাঁত পুনরায় গজানো—এমন সম্ভাবনা আধুনিক চিকিৎসাকে আরও উন্নত, ব্যথাহীন এবং সাশ্রয়ী করে তুলবে। আগামী দিনে এই প্রযুক্তি শুধু দাঁত নয়, শরীরের অন্যান্য অংশে টিস্যু পুনর্গঠনেও বিপ্লব ঘটাতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র: সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ ডেন্টিস্ট্রি, সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন ২০২৫
