প্রতিদিন সকালে উঠে বিছানা গুছিয়ে রাখা, অনেকের চোখেই ‘ভাল অভ্যাস’। ছোটবেলা থেকে আমাদের শেখানো হয়, দিন শুরুর আগে বিছানা ঠিক করা উচিত। কিন্তু স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভ্যাসই নাকি অজান্তে শরীরের ক্ষতি করছে। কারণ ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই বিছানা গোছালে তৈরি হয় এমন পরিবেশ, যেখানে ডাস্ট মাইট বাড়তে পারে যা এলার্জি ও শ্বাসকষ্টের অন্যতম কারণ।

ডাস্ট মাইট কী এবং কেন বিপজ্জনক? রাতে ঘুমানোর সময় আমাদের শরীর থেকে ঘাম, ত্বকের মৃত কোষ আর আর্দ্রতা চাদর ও বালিশে ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক এই আর্দ্র পরিবেশেই সবচেয়ে দ্রুত বাড়ে ডাস্ট মাইট। অদৃশ্য ক্ষুদ্র পোকা যারা ঘরের ধুলোয় বাস করে এবং এগুলো শ্বাসযন্ত্রের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।

ডাস্ট মাইটের বর্জ্য ও মরা দেহকণা বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এগুলো শ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকলে অ্যালার্জি, নাক বন্ধ, হাঁচি, চোখ চুলকানো, বুক জ্বালা, এমনকী অ্যাজমার মতো সমস্যাও বাড়াতে পারে। যারা আগে থেকেই সাইনাস, শ্বাসকষ্ট বা অ্যালার্জিতে ভোগেন, তাদের জন্য এই সমস্যা আরও ভয়ংকর।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুম থেকে উঠেই সঙ্গে সঙ্গে বিছানা গোছানো উচিত নয়। বরং বিছানার চাদর, বালিশ এবং কম্বল ৩০ থেকে ৬০ মিনিট খোলা অবস্থায় রাখতে হবে। এতে ঘুমের সময় জমে থাকা আর্দ্রতা শুকিয়ে যায় এবং ডাস্ট মাইট বংশবৃদ্ধির সুযোগ কমে।গরম ও আর্দ্র পরিবেশে এই পরজীবীগুলো সবচেয়ে দ্রুত বাড়ে। তাই বাতাস চলাচলের সুযোগ দিলে তাদের জীবনধারা প্রভাবিত হয় এবং শোওয়ার জায়গা আরও স্বাস্থ্যকর থাকে।

স্বাস্থ্যকর অভ্যাস কীভাবে গড়ে তুলবেন? বিশেষজ্ঞদের মতে, সপ্তাহে অন্তত একবার চাদর ও বালিশের কভার ধুতে হবে।ডুভেট বা কম্বল নিয়মিত রোদে দিতে হবে অথবা ভ্যাকুয়াম করতে হবে।
তোষকও মাঝে মাঝে রোদে বা বাতাসে রাখতে হবে। ঘরের জানালা খুলে দিয়ে প্রতিদিন কিছুক্ষণ হাওয়া চলাচল করাতে হবে। এগুলো করলে শুধু ডাস্ট মাইট নয়, ঘরে থাকা আরও অনেক অদৃশ্য জীবাণুর পরিমাণ কমে যায়।

অনেকেই মনে করেন, সকালবেলা বিছানা গুছানো মানেই ঘর পরিষ্কার। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিচ্ছন্নতা ঠিক রাখতে গিয়ে যদি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে, তাহলে অভ্যাস বদলানোই বুদ্ধিমানের কাজ। তাই সকালবেলা উঠে খানিকক্ষণ বাদে বিছানা গোছানোই স্বাস্থ্যসম্মত নিয়ম। এতে ঘর যেমন পরিষ্কার থাকবে, তেমনই আপনি পাবেন আরামদায়ক ও নিরাপদ ঘুমের পরিবেশ।