অস্টিওপোরোসিস এমন একটি অবস্থা, যা হাড়কে দুর্বল করে তোলে—ফলে হাড় স্বাভাবিকের তুলনায় পাতলা হয়ে যায়। ভারতে পুরুষদের মধ্যে এই রোগটি অত্যন্ত অবহেলিত একটি সমস্যা। অধিকাংশ পুরুষই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেন না, কারণ দীর্ঘদিন ধরে এটি শুধু নারীদের সমস্যাই বলে মনে করা হয়েছে। এমনকি গুরুতর আঘাত না পাওয়া পর্যন্ত এটি অনেক পুরুষের স্বাস্থ্য–সচেতনতার তালিকায়ও আসে না।

কিন্তু গবেষণা বলছে, সেকেন্ডারি অস্টিওপোরোসিস পুরুষদের মধ্যে মহিলাদের তুলনায় অনেক বেশি দেখা যায়। ৫০ বছরের বেশি বয়সি প্রতি চারজন পুরুষের একজন অস্টিওপোরোসিসে ভোগেন—তা ধরা পড়ুক বা না পড়ুক। তা হলে কেন পুরুষরা এখনও এই রোগকে গুরুত্ব দেন না? আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের প্রেক্ষিতে অর্থোপেডিক সার্জন ড. অভিষেক স্যামুয়েল তুলে ধরলেন এই রোগের প্রকৃতি এবং মোকাবিলার উপায়।

মিথ ভাঙার সময়

জন্মগতভাবে পুরুষদের হাড়ের ঘনত্ব তুলনামূলক বেশি থাকে। তাই বয়স বাড়লে বা ব্যথা হলে তাঁরা তা সাধারণ বার্ধক্যজনিত ব্যথা কিংবা মাংসপেশীর টান বলে এড়িয়ে যান। কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই ‘সুবিধা’ দ্রুত কমে যায়।

ভারতে একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ৪০ বছরের বেশি বয়সি সুস্থ পুরুষদের মধ্যে প্রায় ১১.৫%–এর অস্টিওপোরোসিস রয়েছে এবং ৭০%–এরও বেশি ভিটামিন ডি–এর ঘাটতিতে ভোগেন, যা তাদের হিপ, মেরুদণ্ড এবং কব্জির ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ায়।

বিশ্বব্যাপী চিত্র আরও উদ্বেগজনক। ন্যাশনাল স্পাইন হেলথ ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে ২০ লাখেরও বেশি পুরুষ বর্তমানে অস্টিওপোরোসিসে ভুগছেন এবং আরও এক কোটি ৬০ লাখ পুরুষ অস্টিওপেনিয়ায় (হাড়ের কম ঘনত্ব) আক্রান্ত। অথচ ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষণা জানাচ্ছে, মাত্র ১% আমেরিকান পুরুষ তাদের হাড়ের ঘনত্ব নিয়ে সচেতন।

পুরুষদের ঝুঁকি বাড়ায় যে সব কারণ

অস্টিওপোরোসিসকে সাধারণত নারীদের মেনোপজ–পরবর্তী সমস্যা বলে মনে করা হয়, কারণ ইস্ট্রোজেন হাড়ের ঘনত্ব ধরে রাখতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু পুরুষদের হাড়ের শক্তি বজায় রাখা টেস্টোস্টেরনও ৫০–এর পর কমতে শুরু করে।

সেডেন্টারি জীবনযাপন, পুষ্টিহীনতা, ডায়াবেটিস বা হাইপারথাইরয়েডিজমের মতো রোগ, দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ব্যবহার, ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান—সবই হাড়কে দ্রুত দুর্বল করে। নিকোটিন এবং অ্যালকোহল শরীরের ক্যালসিয়াম–ব্যালান্স নষ্ট করে। অতিরিক্ত অ্যালকোহল লিভার ও অগ্ন্যাশয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে ভিটামিন ডি সক্রিয় হতে পারে না এবং ক্যালসিয়াম শোষণ কমে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে হাড়ঝুঁকি বাড়ায়।

জীবনযাপনে পরিবর্তন জরুরি

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম, হাঁটা, দৌড়নো বা রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং হাড়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী। অনেকেই জানেন না, সঠিক অর্থোপেডিক সাপোর্টও হাড় এবং গাঁটের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমন—

সাপোর্টিভ বেল্ট ও র‌্যাপ মেরুদণ্ডকে স্থিতিশীল রাখে এবং লুম্বার–সারভাইকাল অঞ্চলে বাড়তি চাপ কমায়।
কুশন বা বিশেষ সিটিং সাপোর্ট মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বক্রতা বজায় রাখে এবং ডিস্কে চাপ কমায়।
থাম–সাপোর্টসহ রিস্ট ব্রেস কব্জির ব্যথা কমায়, আঘাত থেকে সুস্থ হতে সাহায্য করে।
নি-ক্যাপ হাঁটুকে স্থিতিশীল রাখে, রক্তসঞ্চালন বাড়ায় এবং বিশেষত ডায়াবেটিক রোগী বা দীর্ঘস্থায়ী হাঁটুর সমস্যায় ভোগা পুরুষদের উপকার করে।

খাদ্যাভ্যাসে যে পরিবর্তন প্রয়োজন

যারা ঝুঁকিপূর্ণ বয়সে বা অবস্থায় রয়েছেন, তাঁদের প্রতিদিন খাবার বা সাপ্লিমেন্ট থেকে ১০০০–১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৬০০–৮০০ আইইউ ভিটামিন ডি গ্রহণ করা উচিত। দুগ্ধজাত খাবার, সবুজ শাকসবজি এবং প্রয়োজন হলে স্বাস্থ্যসম্মত সাপ্লিমেন্ট হাড়কে মজবুত রাখতে সহায়ক। নিয়মিত স্বাস্থ্য–পরীক্ষার অংশ হিসেবে বোন ডেনসিটি স্ক্যান করানো জরুরি।