আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বজুড়ে সাইকেলপ্রেমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত অ্যামস্টারডাম। নেদারল্যান্ডসের এই শহরটি যেন সাইকেলের জন্যই গড়ে উঠেছে। এখানে মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ, কিন্তু সাইকেলের সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি—অর্থাৎ জনসংখ্যার চেয়ে যানবাহন হিসেবে সাইকেলই বেশি। তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই যে অ্যামস্টারডামে গাড়ির চেয়ে সাইকেলের আধিপত্যই বেশি।
শহরের প্রায় ৬০ শতাংশ বাসিন্দা প্রতিদিন যাতায়াতের জন্য সাইকেল ব্যবহার করেন। অফিস, স্কুল, বাজার বা বিনোদনের স্থান—সাইকেলই প্রধান বাহন। যানজট ও দূষণ এড়াতে সাইকেলকে দ্রুততম, সহজতম এবং স্বাস্থ্যকর মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়। শহরের পরিকাঠামোও এমনভাবে সাজানো যে সাইকেল চালানো এখানে অত্যন্ত নিরাপদ ও সুবিধাজনক।
অ্যামস্টারডামের রাস্তায় রয়েছে ৪০০ কিলোমিটারেরও বেশি ডেডিকেটেড সাইকেল পথ। এই লেনগুলো গাড়ির রাস্তা বা ফুটপাত থেকে আলাদা, ফলে চলাচলের সময় ঝুঁকি কম থাকে। শুধু তাই নয়—সাইকেলের জন্য রয়েছে বিশেষ ট্রাফিক সিগন্যাল, আলাদা ক্রসিং এবং বিশালাকৃতির মাল্টি–লেভেল পার্কিং ব্যবস্থা। সাইকেল পার্কিংয়ের জন্য তৈরি করা কিছু ভবন হাজার হাজার সাইকেল ধারণ করতে পারে। ফলস্বরূপ, প্রতিদিন কয়েক লাখ সাইকেল নিরাপদে এবং সুশৃঙ্খলভাবে রাখা যায়।
অ্যামস্টারডামে সাইক্লিং নিরাপদ হওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কঠোর ট্রাফিক নিয়ম। এখানে আইন সাইকেল আরোহীদের অগ্রাধিকার দেয়, এবং চালকেরাও তা মেনে চলতে অভ্যস্ত। গাড়িচালকদের সাইকেলের প্রতি বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। শহরের পরিবেশে সাইকেল চালানোর শিষ্টাচারও দৈনন্দিন জীবনের অংশ—কোথায় ঘণ্টা বাজাতে হবে, কোন দিকে ওভারটেক করতে হবে, কীভাবে লেন পরিবর্তন করতে হবে—এসবই ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয়। ফলে শিশুরা যেমন নির্বিঘ্নে সাইকেল চালাতে পারে, তেমনি বয়স্করাও নিশ্চিন্তে শহরজুড়ে ঘুরে বেড়ান।
সাইকেল ব্যবহারের আরেকটি বড় সুবিধা হল পরিবেশের সুরক্ষা। সাইকেল চালালে কার্বন নিঃসরণ কমে, যানজটও হ্রাস পায়। অ্যামস্টারডামের লক্ষ্য হল ভবিষ্যতে শহরটির নির্দিষ্ট অঞ্চলকে গাড়ি-মুক্ত করা এবং পুরো শহরকে জিরো-এমিশন জোনে পরিণত করা। এজন্যই সাইকেলকে কেন্দ্র করে শহর পরিকল্পনা চালানো হচ্ছে। পরিষ্কার বাতাস, সবুজ পরিবেশ এবং সুস্থ জীবনযাত্রার জন্য সাইক্লিংকে প্রতিদিন আরও বেশি উৎসাহিত করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও সাইকেল অত্যন্ত লাভজনক। সাইকেল চালালে জ্বালানির খরচ নেই, মেরামতের খরচও তুলনামূলকভাবে কম। ফলে বাসিন্দাদের জন্য এটি সাশ্রয়ী পরিবহন। পর্যটকরাও খুব সহজে স্বল্প খরচে সাইকেল ভাড়া নিয়ে পুরো শহর ঘুরে দেখতে পারেন। এতে শহরটি সবার জন্য আরও সহজলভ্য এবং বাজেট–বান্ধব হয়ে ওঠে।
অ্যামস্টারডামের এই সাইকেল–নির্ভরতার মডেল এখন পুরো বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করছে। অনেক শহর অ্যামস্টারডামের মতো বাইক–ফ্রেন্ডলি পরিকাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
অ্যামস্টারডাম দেখিয়ে দিয়েছে—নগর পরিবহন শুধু কার্যকরই নয়, টেকসই ও আনন্দময়ও হতে পারে। শহরটি প্রমাণ করেছে, সঠিক পরিকল্পনা ও জনগণের সচেতনতা থাকলে সাইকেলই আধুনিক নগর জীবনের ভবিষ্যৎ হয়ে উঠতে পারে।
