আজকাল ওয়েবডেস্ক: সারা দিনের দৌড়ঝাঁপ, অফিসের চাপ, যানজটের ক্লান্তি- সব শেষে বাড়ি ফিরে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলেও ঘুম যেন চোখে আসতে চায় না। মোবাইল স্ক্রল করতে করতে কখন যে মাঝরাত পেরিয়ে যায়, তার খেয়াল থাকে না। আধুনিক জীবনযাত্রার এমনই নিদ্রাহীনতার সমস্যায় ভুগছেন অনেকেই। ঘুমের ওষুধের উপর নির্ভরতাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই সমস্যার এক সহজ এবং আশ্চর্য সমাধান লুকিয়ে রয়েছে আপনার স্নানঘরেই। আর তার নাম ‘ডার্ক শাওয়ার’ বা অন্ধকারের স্নান। বিশ্বজুড়ে জীবনশৈলীর অঙ্গ হয়ে উঠছে এই নতুন প্রবণতা। শুধু ভাল ঘুমই নয়, মানসিক চাপ কমাতেও এর জুড়ি মেলা ভার।

কাকে বলে ডার্ক শাওয়ার?
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, এর অর্থ অন্ধকারে স্নান করা। তবে ঘুটঘুটে অন্ধকারেই স্নান করতে হবে, এমনটা নয়। মূল উদ্দেশ্য হল, স্নানের সময়ে উজ্জ্বল আলো, বিশেষত টিউবলাইটের সাদা বা নীল আলোর সংস্পর্শ এড়িয়ে যাওয়া। স্নানঘরের উজ্জ্বল আলো নিভিয়ে, একটি মোমবাতি বা আবছা কোনও নাইট ল্যাম্প জ্বেলে স্নান সারাই হল ডার্ক শাওয়ারের রীতি। এই সামান্য পরিবর্তনই আপনার শরীর ও মনে আনতে পারে বিরাট পার্থক্য।

ডার্ক শাওয়ারের উপকারিতা
১. গভীর ঘুমের চাবিকাঠি: চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ী, আমাদের মস্তিষ্কের পিনিয়াল গ্রন্থি মেলাটোনিন নামক একটি হরমোন তৈরি করে, যা ঘুমকে নিয়ন্ত্রণ করে। উজ্জ্বল আলো, বিশেষ করে মোবাইল বা ল্যাপটপের নীল আলো, এই মেলাটোনিন উৎপাদনে মারাত্মকভাবে বাধা দেয়। রাতে ঘুমের আগে উজ্জ্বল আলোয় স্নান করলে মস্তিষ্ক সজাগ হয়ে যায়। অন্যদিকে, অন্ধকারে বা আবছা আলোয় স্নান করলে মস্তিষ্ক আলোর কোনও সঙ্কেত পায় না, ফলে স্বাভাবিক ছন্দে মেলাটোনিন তৈরি হতে থাকে। এতে স্নানের পর শরীর শান্ত হয় এবং দ্রুত ও গভীর ঘুম আসে।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে

২. মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমায়: ডার্ক শাওয়ার এক ধরনের ‘সেন্সরি ডেপ্রিভেশন’ বা সংবেদী বঞ্চনার কাজ করে। চোখ দিয়ে পারিপার্শ্বিক কোনও কিছু দেখার চাপ না থাকায় আমাদের স্নায়ুতন্ত্র ধীরে ধীরে শান্ত হয়। মন এদিক-ওদিক বিক্ষিপ্ত হওয়ার সুযোগ পায় না। জলের শব্দ, গায়ে জল পড়ার অনুভূতি- এই সব কিছু মিলে ধ্যানের পরিবেশ তৈরি করে, যা মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে অত্যন্ত সহায়ক।

৩. মননশীলতা ও আত্ম-সচেতনতা বৃদ্ধি: অন্ধকারে চোখের বদলে আমাদের অন্য ইন্দ্রিয়গুলি, যেমন ত্বক, কান, নাক অনেক বেশি সজাগ হয়ে ওঠে। ত্বকের উপর জলের স্পর্শ, জলের উষ্ণতা, সাবানের গন্ধ- এই সব অনুভূতি আরও তীব্র এবং জীবন্ত হয়ে ধরা দেয়। এর ফলে মন বিক্ষিপ্ত হয়ে না, যা মননশীলতা বা মাইন্ডফুলনেস চর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। নিজের শরীরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের এটি একটি সহজ উপায়।

কিছু সতর্কতা
তবে অন্ধকারে স্নানের আগে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। স্নানঘরে পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা এড়াতে ‘নন-স্লিপ ম্যাট’ ব্যবহার করুন। মোমবাতি রাখলে তা দাহ্য বস্তু থেকে দূরে, নিরাপদ স্থানে রাখুন। স্নানঘরের কোথায় কী আছে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তবেই আলো নেভানো উচিত।
সুতরাং, ডার্ক শাওয়ার কেবল একটি নতুন ট্রেন্ড নয়, এটি আধুনিক জীবনের মানসিক চাপ এবং অনিদ্রা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি সহজ, প্রাকৃতিক উপায়। কোনও ওষুধ বা দামি যন্ত্র ছাড়াই, শুধুমাত্র একটি ছোট অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে যদি শান্তিতে ঘুমোনো যায়, তবে ক্ষতি কী?