বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া ও বিজ্ঞাপনের দৌলতে 'সুপারফুড' শব্দটি যেন জাদুকাঠির মতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কেউ বলছেন, অ্যাভোকাডো খেলেই শরীরের মেদ কমে, কেউ বলছেন কিনোয়া হল প্রোটিনের ভাণ্ডার। কিন্তু এ-সব দাবির পিছনে কতটা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে? এ নিয়ে সরব হয়েছেন ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের গ্যাস্ট্রো সার্জন ডাঃ অশুমান কৌশল। নিজের এক ভিডিও বার্তায় তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, স্বাস্থ্য ভাল রাখা বা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কোনও একক সুপারফুডের ভূমিকা নেই, বরং পুরো খাদ্যাভ্যাসের ভারসাম্যই সবচেয়ে বড় বিষয়।
ডাঃ কৌশল বলেন, সুপারফুড মূলত একটি 'মার্কেটিং টার্ম' যার কোনও বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা নেই। অ্যাভোকাডো, চিয়া সিড, কিনোয়া, অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার ইত্যাদি খাবারকে যেভাবে ম্যাজিকের মতো উপকারী বলে প্রচার করা হয়, তার পিছনে গবেষণালব্ধ তথ্য খুব সীমিত। বরং প্রতিটি শরীরের চাহিদা ভিন্ন, আর প্রকৃত স্বাস্থ্য নির্ভর করে মোট ক্যালোরি গ্রহণ, পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভাল ফ্যাট, ফাইবার এবং নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের উপর।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, অ্যাভোকাডোকে ভাল ফ্যাটের উৎস বলা হয় ঠিকই কিন্তু আমাদের দেশীয় খাবার যেমন তিল, সরষের তেল, বাদাম, আখরোট-এগুলোর ফ্যাটি অ্যাসিড প্রোফাইল আরও ভারসাম্যপূর্ণ। শুধু তাই নয়, দামেও সাশ্রয়ী এবং বহু শতাব্দী ধরে ভারতীয় রান্নায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। একইভাবে কিনোয়াকে ‘প্রোটিন-সমৃদ্ধ শস্য’ বলা হলেও ডাল, ছোলা, রাজমা, মুগ ডাল, এমনকী পনির এগুলোতে দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা পূরণের মতো পরিমাণ আরও সহজে মেলে।
তিনি আরও বলেন, পেটের মেদ কমানোর ক্ষেত্রে কোনও সুপারফুড জাদুর মতো কাজ করে না। পেটের মেদ কমাতে চাইলে প্রথমে দরকার ক্যালোরি ঘাটতি তৈরি করা, অর্থাৎ যা খাচ্ছেন তার তুলনায় শরীর যেন বেশি ক্যালোরি খরচ করে। এর সঙ্গে নিয়মিত ব্যায়াম, বিশেষ করে স্ট্রেনথ ট্রেনিং করলে পেশিশক্তি বাড়ে যা মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ডাঃ কৌশলের মতে, ভারতীয় রান্নাঘরই আসল সুপারফুডের ভাণ্ডার। দই (প্রোবায়োটিক), ডাল-ছোলা (প্রোটিন), তিল-বাদাম (ভাল ফ্যাট), মিলেট/শস্য (ফাইবার), শাকসবজি (ভিটামিন-খনিজ)-এ সব একত্রে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলে। তাই বিদেশি ট্রেন্ডের পিছনে ছুটে দামি খাবার কেনা মোটেও প্রয়োজন নেই। অতএব, স্বাস্থ্য ভাল রাখতে চাইলে 'একটা বিশেষ খাবারই সব বদলে দেবে'-এ ধারণা ভুল। বরং সঠিক পরিমাণ, বৈচিত্র্য, দেশীয় খাবারের উপর আস্থা এবং নিয়মিত শারীরিক সক্রিয়তাই প্রকৃত সুস্থতার চাবিকাঠি।
