শীতকালে ওজন বেড়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়। এটি আসলে শরীরের পরিবর্তন, জীবনযাপনের ধরন এবং ঋতুভিত্তিক অভ্যাসের স্বাভাবিক ফল। তাপমাত্রা কমে গেলে এবং দিন ছোট হলে শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। সেই সঙ্গে বাড়ে খাওয়ার ইচ্ছে, কমে যায় শারীরিক পরিশ্রম। এই সব মিলিয়েই ধীরে ধীরে ওজন বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয় যদি সচেতন না হওয়া যায়।
পুষ্টিবিদ ডা. গিন্নি কালরা বলেন, “ঋতু বদলের সঙ্গে ওজন হঠাৎ করে বাড়ে না। এর পিছনে শরীরের জৈবিক পরিবর্তন এবং শীতকালের জীবনযাপনের ধরন কাজ করে।” অন্য দিকে, ফিজিশিয়ানস অ্যাসোসিয়েশন ফর নিউট্রিশনের ডিরেক্টর ডা. বিজলি নন্দার মতে, শীতে ওজন বাড়ার মূল কারণ মেটাবলিজম ধীর হওয়া নয়, বরং পরিবেশগত ও আচরণগত পরিবর্তন। দিনের আলো কম পাওয়া, তেলমশলা দেওয়া খাবারের প্রতি ঝোঁক এবং উৎসবের খাওয়াদাওয়াই এর জন্য দায়ী।
কেন শীতে বাড়ে খাওয়ার ইচ্ছে
শীতে ওজন বাড়ার অন্যতম বড় কারণ হল অতিরিক্ত খিদে। সূর্যালোক কমে যাওয়ায় সেরোটোনিন এবং মেলাটোনিন হরমোনের মাত্রা বদলে যায়। এই হরমোনগুলো আমাদের মুড এবং খিদে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে মিষ্টি কিংবা ভাজাভুজির প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়।
ডা. কালরা জানান, শীতে কম সূর্যালোক সরাসরি হরমোনের উপর প্রভাব ফেলে, যার ফলে ভারী ও কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবারের দিকে ঝোঁক বাড়ে। ডা. নন্দার মতে, সেরোটোনিন কমে গেলে কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা বাড়ে। উৎসবের মরশুম এই প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
এছাড়াও ঠান্ডায় শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি জেগে ওঠে। শরীর গরম রাখতে বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছে। তবে আধুনিক জীবনে কম নড়াচড়ার কারণে এই অভ্যাস সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
জীবনযাপনের কোন অভ্যাসগুলো ওজন বাড়ায়
শীতে বাইরে বেরিয়ে হাঁটাচলা বা ব্যায়াম কমে যায়। ফলে ক্যালোরি খরচও কম হয়। তার উপর ভারী খাবার এবং রাত জেগে খাওয়ার ফলে ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকে।
আর একটি নীরব কারণ হল জলশূন্যতা। ডা. কালরা বলেন, “শীতে আমরা কম জল পান করি। অনেক সময় হালকা জলশূন্যতাকেই খিদে বলে ভুল হয়।” এতে অপ্রয়োজনীয় স্ন্যাকিং বেড়ে যায়। ডা. নন্দা জানান, উৎসবের মরশুমে একটু বেশি খাওয়া স্বাভাবিক। তাই এই সময় শরীরচর্চার দিকে বাড়তি নজর দেওয়া জরুরি।
কীভাবে এড়াবেন শীতের ওজন বৃদ্ধি
পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ রাখুন
উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার অল্প পরিমাণে খান। পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটের বদলে গোটা শস্য বেছে নিন। মিষ্টি সপ্তাহে এক-দু’বার অল্প পরিমাণে খাওয়াই ভাল।
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারকে অগ্রাধিকার দিন
প্রোটিন খিদে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং শরীরের শক্তি বজায় রাখে। ডা. নন্দার মতে, প্রোটিন বেশি থাকলে ক্যালোরি খরচও বাড়ে। ভাজা ছোলা, পনির, গ্রিক দই, সেদ্ধ ডিম, টোফু বা প্রোটিন স্মুদি ভাল বিকল্প হতে পারে।
জল পান করতে ভুলবেন না
তেষ্টা না পেলেও দিনে ছ’থেকে আট গ্লাস জল পান করুন। গরম জল বা হার্বাল টি খিদে কমাতে সাহায্য করে।
ঘরের ভিতরেও নড়াচড়া করুন
ঠান্ডায় বাইরে না যেতে পারলে ঘরে হাঁটা, যোগব্যায়াম, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা বা অল্প সময়ের ব্যায়াম করুন।
খাবারের সময় নিয়মিত রাখুন
দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে রাতে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। তাই নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়া জরুরি।
শীতে ওজন বাড়া অনিবার্য নয়। এটি মূলত কিছু অভ্যাসের ফল। পরিমিত খাওয়া, প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য, নিয়মিত জল পান এবং সামান্য হলেও দৈনিক শরীরচর্চা আপনার শরীরকে শীতকাল জুড়ে সুস্থ এবং ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে পারে।
