শীতের সময় শরীরে অনেক ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। গরমকালে বারবার পিপাসা পায় এবং ঠান্ডা জল খেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু শীতে মানুষের জল পিপাসা কম পায় এবং জল খাওয়ার প্রবণতাও কমে যায়। বেশিরভাগ মানুষ এই সময়ে গরম চা–কফি বহুবার খেলেও জল খুব কম পান করেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ঋতু যেমনই হোক, শরীরের জলের প্রয়োজন সব সময়ই একই থাকে। আর কম জল খেলেই ডিহাইড্রেশন বা জলশূন্যতার সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকেই মনে করেন, শীতে শরীরের জল প্রয়োজন কম—যদিও বাস্তবে এর বিপরীতটাই সত্যি। জল কম খেলেই ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ে এবং তা শরীরের ক্ষতি করে।
অ্যামেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, শীতের সময়ও শরীরের পর্যাপ্ত জল প্রয়োজন হয়। শীতে তৃষ্ণার অনুভূতি কম কাজ করে, কিন্তু শরীরের জলশূন্যতা অব্যাহত থাকে। শুষ্ক ঠান্ডা হাওয়া ত্বকের আর্দ্রতা টেনে নেয়, ফলে ত্বক শুকিয়ে যায়। একই সঙ্গে গরম কাপড়ের নিচে অল্প অল্প ঘাম বেরোতে থাকে, যা আমরা টের পাই না। এর ফলে জল না খেলে রক্তসঞ্চালন ধীর হয়ে যায়, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, মাথাব্যথা এবং ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা বাড়ে। তাই শীতেও পর্যাপ্ত জল পান করা জরুরি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—শীতকালে প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ গ্লাস জল পান করা উচিত। পুরুষদের তুলনায় নারীদের জল প্রয়োজন একটু কম, তবে ওজন বেশি হলে, সারাদিন বেশি কাজ করলে বা ব্যায়াম করলে জলের প্রয়োজন আরও বাড়ে। জলের ঘাটতি পূরণে গরম জল, হার্বাল টি, সূপ কিংবা ইনফিউজড ওয়াটারও পান করা যেতে পারে। শীতে তৃষ্ণা কম লাগার কারণে ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ অনেকেই বুঝতে পারেন না। ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া, ত্বক শুষ্ক হওয়া, প্রস্রাবের রং গাঢ় হওয়া, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়া—এসবই ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ। এ রকম কোনও লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত জলপান বাড়ানো উচিত।
শীতে তৃষ্ণা না লাগলেও সামান্য করে বারবার জল পান করতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস গরম জলপান করা ভাল। প্রতিটি খাবারের আগে এবং পরে একটু জল পান করুন। বাড়ি বা অফিসে সবসময় কাছে জল রাখুন এবং সময়-সময়ে জলপান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। নারকেল জল, সবজির স্যুপ, লেবু–জল অথবা গরম জলে তুলসি এবং মধু মিশিয়েও পান করা যেতে পারে।
জল শরীরের প্রতিটি প্রক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য—হজম, রক্তপ্রবাহ, টক্সিন বার করে দেওয়া, ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখা এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ—সবকিছুর জন্যই জল দরকার। শীতে জল কম পান করলে মেটাবলিজ়ম ধীর হয়ে যায় এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল হতে থাকে।
