আমাদের শরীর প্রতিদিন যে সংকেত দেয়, তার মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত একটি বিষয় হল মলের গঠন ও ধরন। চিকিৎসকদের মতে, আপনার মলের রং, ঘনত্ব এবং ধরন শুধু হজম প্রক্রিয়ার প্রতিফলন নয়, এটি আপনার স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিতও দিতে পারে। দৈনন্দিন মলত্যাগের ধরনই বলে দিতে পারে আপনার হজমতন্ত্র, ডায়েট, জলপান, এমনকী মানসিক চাপ কেমন অবস্থায় রয়েছে। তাহলে জেনে নিন কোন ধরনের মল স্বাভাবিক, আর কোনটি শরীরে লুকিয়ে থাকা সমস্যার সংকেত।
অনেকেই শুনে অবাক হন যে মলের গঠন আমাদের অন্ত্রের কার্যকারিতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। যেমনপাথরসদৃশ ছোট টুকরো বা শক্ত, শুকনো মল সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্যের ইঙ্গিত করে। এর কারণ, মল দীর্ঘ সময় ধরে মলাশয়ে আটকে থাকে এবং অতিরিক্ত জল শোষিত হয়ে তা আরও শক্ত হয়ে যায়। আবার বড় লাম্পি বা গাদা-গাদা মলও কনস্টিপেশনের ইঙ্গিত দেয়, যা ফাইবার কম খাওয়া বা কম জল পানের ফল হতে পারে।
অন্যদিকে, নরম ক্লাব-আকৃতির মল যা পুরোপুরি শক্ত নয় তা বলে দেয় যে খাদ্যতালিকায় ফাইবারের অভাব রয়েছে। ফাইবার কম হলে মল সঠিকভাবে গঠন পায় না এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক ছন্দে ব্যাঘাত ঘটে। আরও গুরুতর হল ফোলা, ঢিলা মল, যা ‘মাইল্ড ডায়ারিয়া’র লক্ষণ। এতে বোঝা যায় মল খুব দ্রুত অন্ত্র দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, ফলে শরীর প্রয়োজনীয় জল ধরে রাখতে পারছে না।
সবচেয়ে চিন্তার কারণ জলীয় মল, যেখানে কোনও শক্ত অংশ থাকে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন মল এক-দু দিনের বেশি স্থায়ী হলে তা সংক্রমণ, খাদ্যদূষণ বা অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগের সংকেত হতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
তাহলে আদর্শ বা সুস্থ মল কেমন? বিশেষজ্ঞের মতে, মসৃণ আকৃতির এবং সহজে বেরিয়ে আসে এমন মলই সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর। এতে বোঝা যায়, আপনার অন্ত্রে জল, ফাইবার এবং ব্যাকটেরিয়ার যথাযথ ভারসাম্য রয়েছে। স্বাভাবিক মলের জন্য কয়েকটি নিয়ম মেনে চলা
১. ফাইবারযুক্ত খাবার খানঃ শাক-সবজি, ফল, গোটা শস্য ইত্যাদি ডায়েটে রাখুন।
২. পর্যাপ্ত জল পান করুনঃ হাইড্রেশন মলকে নমনীয় রাখতে সাহায্য করে।
৩. নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে তুলুনঃ প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় মলত্যাগের অভ্যাস রাখা ভাল।
৪. দৈনন্দিন ব্যায়াম করুনঃ হাঁটা, যোগব্যায়াম বা অন্য কোনও সক্রিয় কাজ অন্ত্রে গতি বাড়াতে পারে।
৫. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ মানসিক চাপ অজান্তেই পাচনতন্ত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।
৬. প্রসেসড খাবার সীমিত রাখুনঃ অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার অন্ত্রের স্বাভাবিক কাজকে বাধা দিতে পারে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি? যদি আপনার মলের ধরণ হঠাৎ বদলে যায় বা দীর্ঘ সময় ধরে অস্বাভাবিক থাকে যেমন, জলীয় মল কয়েক দিনের বেশি থাকা, শক্ত পাথরসদৃশ মল, বা এমন গঠন যা স্বাভাবিক নয় তাহলে ডাক্তার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
