অনেকের ধারণা, কলা শুধুই ওজন বাড়ানোর কাজে লাগে। কিন্তু বাস্তবে কলা এমন এক সুপারফুড, যা শরীরের জন্য অসংখ্য পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে আসে। এতে কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা শরীরে দ্রুত শক্তি জোগায়। ফাইবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে। এছাড়া ভিটামিন বি৬ এবং সি মস্তিষ্ক, ত্বক ভাল রাখে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, আর ম্যাগনেশিয়াম হাড় ও পেশির স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কলা শুধুমাত্র ওজন বাড়ানোর নয়। বরং এটি তৎক্ষণাৎ শক্তির উৎস হিসেবেও কাজ করে। ওয়ার্কআউটের আগে বা পরে কলা খেলে ক্লান্তি দূর হয় এবং পেশি দ্রুত পুনরুদ্ধার হয়। কলায় থাকা ফাইবার হজমতন্ত্রকে মজবুত করে, কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাসের সমস্যা কমায়। এতে থাকা পটাশিয়াম হার্ট ও কিডনির স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। অনেকেই ভাবেন কলা ওজন বাড়ায়, কিন্তু এতে ক্যালরি কম ও ফাইবার বেশি থাকায় এটি পেট ভরা রাখে এবং অপ্রয়োজনীয় ক্ষুধা কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
কলায় থাকা ট্রিপটোফ্যান নামের একটি অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরে সেরোটোনিন তৈরি করে, যা মানসিক চাপ কমিয়ে মুড ভাল রাখতে সহায়তা করে। একইসঙ্গে এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালসিয়াম হাড়কে মজবুত করে, আর ভিটামিন সি ত্বককে উজ্জ্বল ও সুস্থ রাখে। গর্ভাবস্থায়ও কলা অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা ফোলেট ও ভিটামিন বি৬ ভ্রূণের সঠিক বৃদ্ধি এবং মর্নিং সিকনেস কমাতে সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সকালে জলখাবারের সময় বা ব্যায়ামের আগে ও পরে কলা খাওয়া সবচেয়ে ভালো। তবে দিনে এক থেকে দু’টির বেশি খাওয়া উচিত নয়। সংক্ষেপে বলা যায়, কলা কেবল ওজন বাড়ানোর ফল নয়—এটি শক্তি, হজম, হৃদযন্ত্র, হাড়, ত্বক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সমানভাবে উপকারী এক পরিপূর্ণ সুপারফুড।
সব দিক বিবেচনা করলে বলা যায়, কলা এমন এক সহজলভ্য কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে উপকারী ফল, যা শরীরের প্রায় প্রতিটি প্রয়োজন পূরণে ভূমিকা রাখে। এটি যেমন দ্রুত শক্তি জোগায়, তেমনি হজম, রক্তচাপ, হাড়, ত্বক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও সমান উপকারী। নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে কলা খাওয়া শরীরকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। তাই কলাকে শুধু ওজন বাড়ানোর ফল হিসেবে নয়, বরং এক সম্পূর্ণ পুষ্টিকর ও প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যরক্ষক খাদ্য হিসেবে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
