শীতকালে সূর্যালোকের সংস্পর্শ কমে যাওয়ায় নীরবে অনেকেই ভিটামিন ডি-র ঘাটতির দিকে এগিয়ে যান। অনেক সময় বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়া হলেও এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। হাড়ে ব্যথা, পেশির দুর্বলতা, জয়েন্টে শক্তভাব থেকে শুরু করে হাড় ভাঙার ঝুঁকি পর্যন্ত বাড়তে পারে। চিকিৎসকদের মতে, শীতে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি রোধে খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শীতকালে কীভাবে খাদ্যের মাধ্যমে ভিটামিন ডি-র মাত্রা ঠিক রাখা যায়, তা নিয়ে কথা বলেছেন দুই অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা. অভিষেক বৈশ এবং ডা. অখিলেশ রাঠি।

ভিটামিন ডি ও শীতকাল

শীতকালে দিনের আলো ও রোদে থাকার সময় কমে যাওয়ায় শরীরে ভিটামিন ডি-র মাত্রাও স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। ডা. বৈশ বলেন, “শীতকালে আমরা প্রায়ই এমন রোগী দেখি, যাঁরা হাঁটুর ব্যথা, পিঠে যন্ত্রণা বা পেশিতে অস্বাভাবিক ক্লান্তির অভিযোগ নিয়ে আসেন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এর মূল কারণ সূর্যালোকের অভাবে বেড়ে যাওয়া ভিটামিন ডি-র ঘাটতি।”

তিনি আরও জানান, ক্যালসিয়াম শোষণ ও হাড়ের গঠনে ভিটামিন ডি অত্যন্ত জরুরি। সূর্যালোকের মাধ্যমে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি কমে গেলে খাদ্য থেকেই সেই ঘাটতি পূরণ করতে হয়। শীতকালে কী খাবেন, তা ঠিক করে পরিকল্পনা করলেই এই সমস্যা অনেকটাই প্রতিরোধ করতে পারে।

ফ্যাটি মাছ

ডা. বৈশের মতে, স্যামন, ম্যাকারেল, সার্ডিন ও টুনা ভিটামিন ডি-র অন্যতম সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক উৎস। তিনি সপ্তাহে অন্তত দু’থেকে তিনবার এই মাছগুলো খাওয়ার পরামর্শ দেন। এতে হাড়ের ঘনত্ব বজায় থাকে এবং পেশির শক্তি বাড়ে।

তাঁর কথায়, “ফ্যাটি মাছ থেকে পাওয়া ভিটামিন ডি খুব সহজে শরীরে শোষিত হয় এবং জয়েন্ট ভাল রাখে, বিশেষ করে যাঁদের প্রাথমিক আর্থ্রাইটিস বা বয়সজনিত হাড় ক্ষয়ের সমস্যা রয়েছে।”

ডিমের কুসুম

ডা. রাঠি জানাচ্ছেন, ডিমের কুসুম ভিটামিন ডি-র একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এতে প্রয়োজনীয় ফ্যাটের পাশাপাশি নিয়মিত পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। শীতকালের খাদ্যতালিকায় ডিমকে সহজেই রাখা যায়।

তিনি বলেন, “ডিমের কুসুম পুষ্টিগুণে ভরপুর।  এটি ভিটামিন ডি গ্রহণ বাড়াতে সাহায্য করে। সঠিক মাত্রায় খেলে এটি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও পেশি-হাড়ের জন্যও উপকারী।”

ফোর্টিফায়েড খাবার

ভিটামিন ডি-যুক্ত (ফোর্টিফায়েড) দুধ, দই, সিরিয়াল এবং উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধের বিকল্পগুলি নিরামিষভোজীদের জন্য কার্যকর উৎস হিসাবে উঠে এসেছে। শীতকালে এই খাবারগুলো বিশেষভাবে উপযোগী।

ডা. রাঠির মতে, “যাঁরা দিনের বেশিরভাগ সময় ঘরের ভিতরে কাটান যেমন, অফিস কর্মী, ছাত্রছাত্রী বা বয়স্ক মানুষ, তাঁদের জন্য ফোর্টিফায়েড খাবার ভিটামিন ডি পাওয়ার একটি কার্যকর উপায়।”

রোদে শুকনো মাশরুম

ডা. রাঠি জানান, কিছু বিশেষ ধরনের মাশরুম অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে এলে স্বাভাবিকভাবেই ভিটামিন ডি তৈরি করে। রোদে শুকনো মাশরুম তরকারি, স্যুপ বা স্টার-ফ্রাইয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, “এটি উদ্ভিদ-ভিত্তিক ভিটামিন ডি-র বিরল প্রাকৃতিক উৎসগুলোর একটি, যা প্রাণিজ খাবার এড়িয়ে চলা মানুষের জন্য খুবই উপযোগী।”

কড লিভার অয়েল ও দুগ্ধজাত খাবার

ডা. বৈশ জানান, কড লিভার অয়েল ভিটামিন ডি-র অন্যতম উৎস। এছাড়াও চিজ ও মাখনে অল্প পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে, যা রোজ খেলে উপকার হতে পারে। তাঁর কথায়, সময়ে পরীক্ষা, খাদ্যাভ্যাসে সংশোধন ও সঠিক সাপ্লিমেন্টেশন ভবিষ্যতে হাড় ও জয়েন্টের জটিলতা প্রতিরোধ করতে পারে।

এ বিষয়ে ডা. রাঠি যোগ করেন, “ভিটামিন ডি-র ঘাটতি শুধু হাড়ের সমস্যা নয়। এটি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, এনার্জি লেভেল এবং সামগ্রিক সুস্থতার উপর প্রভাব ফেলে। তাই পুষ্টি ও চিকিৎসার মাধ্যমে শরীরকে আগে থেকেই সুরক্ষিত রাখা উচিত।”