আজকাল ওয়েবডেস্ক: বছর দশেক আগে সানি লিওনি যখন ম্যানফোর্স কন্ডোমসের মুখ হয়েছিলেন, তখন তা ছিল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যে সময়ে কন্ডোমের বিজ্ঞাপন নিয়ে পরিবারে অস্বস্তি এবং সেন্সরশিপের ভ্রুকুটি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সানির সেই সাহসী সিদ্ধান্ত তখন যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে রাখঢাকের বেড়াজাল ছিন্ন করে বিষয়টিকে অনেকটাই মূলস্রোতে নিয়ে আসে।

 

এক দশক পরেও সানি এই ব্র্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু সমস্যা হল তিনি বাদে প্রথম সারির অধিকাংশ অভিনেত্রীই এখন কন্ডোমের বিজ্ঞাপনে মুখ দেখাতে নারাজ। এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতেই এবার অদ্ভুত একটি পদ্ধতি বেছে নিল সংস্থাটি। নির্মাতা সংস্থার মুখ এবার মীরা কপূর। নাহ্ মীরা কোনও তারকা নন, মডেলও নন। মীরা সম্পূর্ণ এআই বা কৃত্রিম মেধা দিয়ে নির্মিত একটি চরিত্র। এবার এই এআই নির্মিত যুবতীই হবে কন্ডোম নির্মাতা সংস্থার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। শহর থেকে মফস্‌সল, সব জায়গার দর্শকের কাছে তাকে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ম্যানকাইন্ড ফার্মার ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব জুনেজা জানিয়েছেন, তারকাদের এড়িয়ে নিজেদের সৃজনশীল ভাবনা বজায় রাখতেই এই এআই উদ্যোগ। তিনি কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন, প্রথম সারির অভিনেত্রীরা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় বাধ্য হয়েই এই নতুন পথে হাঁটতে হয়েছে তাঁদের।

 

জুনেজা জানান, প্রায় এক বছর ধরে একাধিক সংস্থা এবং পেশাদার শ্যুটের মাধ্যমে মীরার চেহারা ও ব্যক্তিত্বকে নিখুঁতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। তবে তিনি এও স্পষ্ট করে দেন, “এআই অ্যাম্বাসাডর আমাদের নতুন দিশা দেখালেও সানি লিওনি আমাদের প্রচারের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁর তারকাখ্যাতি ব্র্যান্ডের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মীরার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। বায়োতে স্পষ্ট লেখা যে সে এআই চরিত্র, কিন্তু অনেকেই তাকে আসল মানুষ বলে ভুল করেন। নবরাত্রির মতো উৎসবে শুভেচ্ছা জানানো থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ, সবেতেই স্বচ্ছন্দ মীরা। জুনেজার কথায়, দর্শকের সঙ্গে মীরার একটি সংযোগ তৈরি করাই ছিল তাঁদের লক্ষ্য। ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হওয়ার আগেই সে নিজের অনুগামী তৈরি করে ফেলে।

 

জনসমক্ষে মীরার পরিচিতি করাতে সংস্থাটি ‘ফিল্টারকপি’-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। সেখানে রক্তমাংসের প্রতিযোগীদের সঙ্গে লড়াই করে অনলাইন ভোটে জয়ী হয় মীরা। সংস্থা জানিয়েছে, পুরো প্রক্রিয়াটিতে সমস্ত আইনি এবং নৈতিক দিকগুলি মেনে চলা হয়েছে। টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়া এবং খবরের কাগজ সব মাধ্যমেই দেখা যাবে মীরাকে।

 

বিজ্ঞাপনী ছবিতে আকাঙ্ক্ষা, আবেগ, প্রেম এবং প্রলোভনের মতো নানা অনুভূতি ফুটিয়ে তুলেছে এই এআই মডেল। অভাবনীয় বিষয় হল, বিজ্ঞাপনী ছবিতে প্রথমে এক অভিনেত্রীকে দিয়ে অভিনয় করানো হয়। পরে প্রযুক্তির সাহায্যে তাঁর মুখের জায়গায় বসিয়ে দেওয়া হয় মীরার মুখ।

জুনেজার মতে, কন্ডোমের বাজারে ম্যানফোর্সের শেয়ার প্রায় ২৯ শতাংশ। ছোট ও মাঝারি শহরগুলিতে ব্যাপক বিপণন এবং সচেতনতার সঙ্গে যৌনতার মিশ্রণে তৈরি বিজ্ঞাপনই তাদের সাফল্যের কারণ। কার্তিক আরিয়ানের সঙ্গে তাদের একটি বিজ্ঞাপন পারস্পরিক সম্মতির বার্তা দিয়েছিল, আবার ইনফ্লুয়েন্সার ডলি সিংহের সঙ্গে একটি বিজ্ঞাপন যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনায় মহিলাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানায়।

 

ভারতের বাজারে ডিউরেক্স, কামসূত্র (বিপাশা বসু এবং করণ সিংহ গ্রোভার যার মুখ ছিলেন), মুডস এবং স্কোরের মতো ব্র্যান্ডগুলিও বেশ জনপ্রিয়।

যৌন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনে সামাজিক ছুঁৎমার্গ আজও বর্তমান। জুনেজা মনে করেন, এআই-এর মাধ্যমে এই বাধা কাটানো সহজ হবে। তাঁর কথায়, “আজকের প্রজন্ম অনেক বেশি সচেতন। তারা সুরক্ষিত থাকতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে চায়। প্রথাগত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে যেখানে পৌঁছনো যায় না, এআই সেখানে আমাদের সাহায্য করছে।” গত বছর রণবীর সিংহের সংস্থা ‘বোল্ড কেয়ার’-এর বিজ্ঞাপনে ইন্টারনেট ব্যক্তিত্ব জনি সিন্সকে এনে যৌন স্বাস্থ্যের মতো বিষয়কে মজার মোড়কে তুলে ধরা হয়েছিল, যা ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। ম্যানফোর্সের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে, ভারতে বিপণনের দুনিয়ায় এআই-এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। এখন দেখার, অন্য ব্র্যান্ডগুলিও এই পথে হাঁটে কি না।