আজকাল ওয়েবডেস্ক: চা বাঙালির দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ক্লান্তি দূর করতে বা কাজের ফাঁকে একটু সতেজ হতে চায়ের কাপে চুমুক দেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। আড্ডা মারতে মারতে কিংবা তর্ক বিতর্কে চায়ের কাপে ঝড় তুলতে বরাবরই সিদ্ধহস্ত বাঙালি। তবে জানেন কি, পরিমিত মাত্রায় চা পান যেখানে শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে, সেখানে অতিরিক্ত চা সেবন ডেকে আনতে পারে বিপদ?

১. ঘুমের শত্রু ক্যাফেইন: চায়ে থাকা অন্যতম প্রধান উপাদান ক্যাফেইন। পরিমিত মাত্রায় এটি মস্তিষ্ককে সজাগ রাখতে সাহায্য করলেও, অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরে প্রবেশ করলে ঘুমের স্বাভাবিক চক্র ব্যাহত হয়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর বা রাতে চা পান করলে অনিদ্রা বা ঘুমের গভীরতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদী অনিদ্রা থেকে মনোযোগের অভাব, খিটখিটে মেজাজ এবং অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতা সৃষ্টি হতে পারে।
২. অম্বল ও হজমের গোলযোগ: অতিরিক্ত চা পানের একটি অন্যতম সাধারণ কুফল হল অম্বল বা বুকজ্বালা। চা পাকস্থলীতে অ্যাসিডের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে, যার ফলে অ্যাসিডিটি, গ্যাস এবং বদহজমের মতো সমস্যা দেখা দেয়। খালি পেটে চা পানের অভ্যাস এই সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলে। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চলতে থাকলে গ্যাস্ট্রিক আলসারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। বিশেষ করে যাঁরা দুধ চা পান করেন তাঁদের ঝুঁকি আরও বেশি।
৩. শরীরে লৌহ শোষণে বাধা: চায়ের মধ্যে ট্যানিন নামক একটি উপাদান থাকে, যা শরীরের খাদ্য থেকে লৌহ বা আয়রন শোষণের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে নিয়মিত অতিরিক্ত চা পান করলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এর পরিণতিতে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ার মতো রোগ হতে পারে, যার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়া, মাথা ঘোরা এবং শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ দেখা দেয়।
৪. অস্থিরতা ও উদ্বেগ বৃদ্ধি: ক্যাফেইন একটি উদ্দীপক পদার্থ হওয়ায় অতিরিক্ত চা সেবনে স্নায়ুতন্ত্র অতিমাত্রায় উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এর ফলে মানসিক উদ্বেগ, অস্থিরতা, বুক ধড়ফড়ানি এবং এমনকী হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। যারা ইতিমধ্যেই অ্যাংজাইটি বা প্যানিক ডিসঅর্ডারে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চা পান পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে।
সবমিলিয়ে চা পানের অভ্যাস ত্যাগ করার প্রয়োজন না থাকলেও, এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। দিনে ২-৩ কাপের বেশি চা পান না করাই শ্রেয়। পাশাপাশি, নিজের শরীরের প্রতি নজর রেখে কোনো রকম অস্বস্তি দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য খাদ্যাভ্যাসে পরিমিতিবোধ বজায় রাখা অপরিহার্য।