আজকাল ওয়েবডেস্ক: কোমরের ব্যথা সারাতে লোকমুখে প্রচলিত এক টোটকা মেনে আটটি জ্যান্ত ব্যাঙ গিলে ফেললেন পূর্ব চিনের এক অশীতিপর বৃদ্ধা। ৮২ বছর বয়সি ওই মহিলার কাণ্ডে শোরগোল পড়ে গিয়েছে নেটমাধ্যমে।
চিনের বিভিন্ন সংবাদসংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের শুরুতে ঝেজিয়াং প্রদেশের হ্যাংঝাউ শহরের বাসিন্দা ঝাং নামের ওই বৃদ্ধাকে তীব্র পেটের যন্ত্রণার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকের কাছে তাঁর ছেলে বলেন, “আমার মা আটটা জ্যান্ত ব্যাঙ খেয়েছেন। এখন যন্ত্রণার চোটে তিনি হাঁটতেও পারছেন না।”
জানা গিয়েছে, ঝাং দীর্ঘ দিন ধরে হার্নিয়েটেড ডিস্কের সমস্যায় ভুগছিলেন। লোকমুখে তিনি শুনেছিলেন, জ্যান্ত ব্যাঙ গিলে খেলে নাকি কোমরের ব্যথা কমে যায়।
এই তত্ত্বে বিশ্বাস করে, ওই বৃদ্ধা তাঁর পরিবারকে কয়েকটি জ্যান্ত ব্যাঙ ধরে আনতে বলেন। তবে কী কারণে তিনি ব্যাঙগুলি চেয়েছিলেন, তা পরিবারের সদস্যদের জানাননি।
পরিবারের সদস্যরা পূর্ণবয়স্ক মানুষের হাতের তালুর চেয়েও ছোট আকারের কয়েকটি ব্যাঙ ধরে আনার পর ঝাং সেগুলিকে রান্না না করেই জ্যান্ত গিলে ফেলেন। তিনি প্রথম দিন তিনটি এবং পরের দিন বাকি পাঁচটি ব্যাঙ গিলে খান বলে খবর।
প্রথমে পেটে সামান্য অস্বস্তি হলেও পরের কয়েক দিনে যন্ত্রণা ক্রমশ তীব্র হতে থাকে। এর পরেই ঝাং তাঁর পরিবারের কাছে ব্যাঙ গেলার কথা খুলে বলেন।
আরও পড়ুন: পেশি ফোলাতে স্তনদুগ্ধ খাচ্ছেন বডিবিল্ডাররা, প্রাপ্তবয়স্কদের এই দুধ কতটা উপকারী? কী বলছে বিজ্ঞান?
এর পরই তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। হ্যাংঝাউ-এর ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটি ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হাসপাতালে চিকিৎসকেরা ঝাং-এর শারীরিক পরীক্ষা করেন। তাঁরা ভেবেছিলেন টিউমারের সমস্যা। কিন্তু প্রাথমিক পরীক্ষার পর সেই সম্ভাবনা খারিজ করে দেন। কিন্তু দেখা যায় তাঁর রক্তে অক্সিফিল কোষের মাত্রা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। এটি পরজীবী সংক্রমণ এবং রক্তের রোগের মতো বিভিন্ন অসুস্থতার ইঙ্গিত দেয়।
এর পর আরও কিছু পরীক্ষা করার পর চিকিৎসকেরা নিশ্চিত হন যে ঝাং পরজীবী জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন।
হাসপাতালের এক চিকিৎসক সংবাদমাধ্যমকে জানান, “জ্যান্ত ব্যাঙ গেলার ফলে রোগীর পরিপাকতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তাঁর শরীরে স্পারগানাম-সহ বেশ কিছু পরজীবী বাসা বেঁধেছে।”
আরও পড়ুন: পেশি ফোলাতে স্তনদুগ্ধ খাচ্ছেন বডিবিল্ডাররা, প্রাপ্তবয়স্কদের এই দুধ কতটা উপকারী? কী বলছে বিজ্ঞান?
দু’সপ্তাহ চিকিৎসার পর অবশেষে ঝাং-কে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হ্যাংঝাউ হাসপাতালের এক প্রবীণ চিকিৎসক উ ঝংওয়েন-এর মতে, ঝাং-এর মতো ঘটনা বিরল নয়। উ বলেন, “আমরা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এমন বেশ কয়েক জন রোগী পেয়েছি। জ্যান্ত ব্যাঙ গেলা ছাড়াও, কেউ কেউ কাঁচা সাপের বা মাছের পিত্ত খান, অথবা নিজেদের ত্বকে ব্যাঙের চামড়া ঘষেন।” উ আরও জানান, এই রোগীদের অধিকাংশই বয়স্ক এবং তাঁরা নিজেদের স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে পরিবারের সঙ্গে বিশেষ আলোচনা করেন না। অবস্থা গুরুতর হলেই তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসেন।
তিনি আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, “উদাহরণস্বরূপ, একটি গুজব প্রচলিত আছে যে শরীরের উপর ব্যাঙের চামড়া লাগালে নাকি চর্মরোগ সারে। কিন্তু এই টোটকার স্বপক্ষে কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। উল্টে, এর মাধ্যমে পরজীবী শরীরে প্রবেশ করতে পারে, যার ফলে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, মস্তিষ্কে সংক্রমণ এমনকি প্রাণহানির আশঙ্কাও থাকে।”
আরও পড়ুন: পেশি ফোলাতে স্তনদুগ্ধ খাচ্ছেন বডিবিল্ডাররা, প্রাপ্তবয়স্কদের এই দুধ কতটা উপকারী? কী বলছে বিজ্ঞান?
চিনে সমাজমাধ্যমে এমন অনেক অদ্ভুত অবৈজ্ঞানিক টোটকা ঘুরে বেড়ায়। কিছুদিন আগেই ঝেজিয়াং প্রদেশেই এক ছ'মাসের শিশুকন্যা লেড পয়জনিং বা সিসার বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। কারণ তার মা ইন্টারনেটে শেখা একটি পদ্ধতি মেনে শিশুর একজিমা সারানোর জন্য প্রায়শই লেড অ্যাসিটেট দ্রবণে তার হাত ডুবিয়ে রাখতেন। চিকিৎসকদের মতে, এর ফলে অবশিষ্ট সিসা ওই শিশুর ত্বকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। তাই ইন্টারনেটে দেখা বা লোকের মুখে শোনা এই ধরনের টোটকায় কান দিতে নিষেধ করছেন চিকিৎসকেরা।
