আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্পর্কের ভিত বা সাফল্য অজানতেই নাড়িয়ে দিতে পারে 'ড্রাই বেগিং'। সম্পর্কে সাফল্যের চাবিকাঠি হিসেবে যোগাযোগকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরা হয়, এবং সেটি যথার্থও বটে। স্পষ্ট, খোলামেলা, সৎ এবং কার্যকর যোগাযোগের পাশাপাশি একে টিকিয়ে রাখতে আবশ্যক হয় আবেগগত সততা ও পারস্পরিক সম্মান। যখন একে অপরের চাহিদা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা যায়, তখন সম্পর্ক দৃঢ় হয়। কিন্তু বিপরীতভাবে, চাহিদা যদি পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত বা অপরাধবোধ সৃষ্টি করে প্রকাশ করা হয়, তাহলে সম্পর্কের ভিত ধীরে ধীরে নড়বড়ে হয়ে পড়ে। এমন এক ধরনের সূক্ষ্ম, কিন্তু বিষাক্ত আচরণকে সাম্প্রতিক কালে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ‘ড্রাই বেগিং’।
‘ড্রাই বেগিং’ শব্দটি শুনতে হয়তো ইন্টারনেট ঘরানার কিছু অদ্ভুত শব্দের মতো, তবে বাস্তবে এটি একটি অত্যন্ত প্রচলিত মানসিক প্রবণতা, যা অনেকেই বুঝতে না পেরে চর্চা করে থাকেন। যদিও এখনো এটি মনোবিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে স্বীকৃত নয়, তবুও অনলাইন থেরাপি ও পরামর্শ সভায় এই শব্দটি ক্রমেই গুরুত্ব পাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের থেরাপিস্ট ড্যারেন ম্যাগি এই শব্দটির জনপ্রিয়তা বাড়াতে সাহায্য করেছেন। তার মতে, ড্রাই বেগিং হল এমন এক ধরণের পরোক্ষ, প্যাসিভ-অ্যাগ্রেসিভ যোগাযোগ কৌশল, যেখানে কেউ সরাসরি কিছু না চেয়ে আবেগে প্রভাব ফেলার মাধ্যমে অপরকে কিছু করতে বাধ্য করার চেষ্টা করে। এতে সরাসরি ভাষার বদলে ব্যবহৃত হয় দোষারোপ, কটাক্ষ বা এমন কিছু মন্তব্য যা শুনতে সাধারণ মনে হলেও, ভিতরে লুকিয়ে থাকে চাহিদা চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা।
আরও পড়ুন: যৌনতায় 'লোডশেডিং' হলে কীভাবে সাড়া দেবে শরীর? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
যেমন কেউ যদি বলে, “আমি তো একাই সব কাপড় কাচছি” বা “অনেকের সঙ্গী হলে তো এতেই খুশি থাকতো”, তাহলে সেটি প্রাথমিকভাবে নিরীহ শোনালেও আসলে একটি অপ্রত্যক্ষ অভিযোগ। এই ধরনের কথাবার্তায় অপরপক্ষ প্রায়শই মানসিক চাপে পড়ে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধেও কিছু করতে বাধ্য হন। এই পদ্ধতি কার্যত অপরের সহানুভূতির উপর নির্ভর করে তাদের কাছ থেকে কিছু আদায় করার চেষ্টা, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একতরফা দায় তৈরি করে দেয় এবং সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করে।
অনেকেই বুঝতে পারেন না যে তারা এই পদ্ধতির আশ্রয় নিচ্ছেন। থেরাপিস্ট এরিয়েল সেতনার বলেন, এটি সবসময়ই হিংসাত্মক বা কৌশলী অভিপ্রায়ে হয় না। বরং বহু মানুষ ছোটবেলা থেকেই শেখেননি কীভাবে পরিষ্কারভাবে কিছু চাইতে হয়। তারা মনে করেন, সরাসরি প্রত্যাখ্যানের চেয়ে ইঙ্গিত দিয়ে কিছু বলাই নিরাপদ। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে গভীর ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ হোপ কেলার এর মতে, একটি টেকসই সম্পর্ক গড়ে ওঠে যখন দু’জন মানুষ গভীরভাবে একে অপরকে বুঝতে চেষ্টা করে এবং নিজেকে খোলামেলা ভাবে প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু প্যাসিভ-অ্যাগ্রেসিভ রীতি তার সম্পূর্ণ বিপরীত এবং এতে সম্পর্কের মধ্যে সঙ্কোচ, দূরত্ব, আত্মবিশ্বাসের অভাব, এবং শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদও ঘটতে পারে।
এই আচরণ যদি বারবার ঘটতে থাকে, তবে সেটা একটি প্যাটার্ন বা অভ্যাসে পরিণত হয়। তখন সেটা শুধুই মানসিক চাপ নয়, বরং একধরনের সম্পর্কবিনাশী ছাঁচে পরিণত হয়। তাই এই অভ্যাস চিনে ফেলা এবং তার মোকাবিলা করাই প্রথম ধাপ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আচরণ দেখা দিলে সরাসরি অভিযোগ না তুলে শান্তভাবে আলোচনা করা জরুরি। এতে অপরপক্ষ প্রতিরোধমূলক মনোভাব না নিয়ে নিজেকে খোলামেলা করতে পারেন।
এই ধরনের পরিস্থিতিতে সম্পর্কের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হলে প্রয়োজন খোলামেলা ও সরাসরি যোগাযোগ, অপরের দৃষ্টিকোণকে গুরুত্ব দেওয়া, পরিষ্কার করে নিজের চাহিদা বলা এবং প্রয়োজনে থেরাপি বা সম্পর্ক পরামর্শ গ্রহণ করা। কেউ যদি বুঝতে পারেন যে তারা বা তাদের সঙ্গী ড্রাই বেগিং করছেন, তবে অপরকে দোষ না দিয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও শ্রদ্ধার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। কারণ, কেউই মন পড়তে পারে না। তাই সম্পর্ক বাঁচাতে হলে মনের কথা বলা, স্পষ্টভাবে বলা এবং দোষারোপ না করে বোঝাপড়ার পথ খুঁজে নেওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
