চুলকে সোজা ও মসৃণ রাখার জন্য অনেকেই নিয়মিত হেয়ার স্ট্রেটনার ব্যবহার করেন। অফিস, পার্টি বা প্রতিদিনের রুটিনে চুলের নিখুঁত লুক পেতে অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে হেয়ার স্ট্রেটনার। কিন্তু জানেন কি নিয়মিত চুল সোজা করার এই অভ্যাসে বাড়তে পারে ক্যানসারের ঝুঁকি। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন ভয়ঙ্কর তথ্য। নিয়মিত হেয়ার স্ট্রেটনার ব্যবহার করলে জরায়ু ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করেন গবেষকরা।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (এনআইএইচ)-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত রাসায়নিক স্ট্রেটনার ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে জরায়ু ক্যানসারের আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। গবেষকরা মনে করছেন, হেয়ার স্ট্রেটনারে থাকা কিছু হরমোন-বিঘ্নকারী রাসায়নিক শরীরে প্রবেশ করে প্রজনন সংক্রান্ত হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এর ফলেই দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়ে। গবেষণায় অংশ নেওয়া কয়েক হাজার মহিলার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যাঁরা বছরে কয়েকবারের বেশি স্ট্রেটনার ব্যবহার করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি থাকে।
আরও পড়ুনঃ শুধু বুকে ব্যথাই হার্ট অ্যাটাকের প্রথম ইঙ্গিত নয়, বরং কোন কোন লক্ষণ দেখলে বুঝবেন মারণ রোগের বিপদ?
কীভাবে ক্ষতি করে এই রাসায়নিক? বেশিরভাগ হেয়ার স্ট্রেটনারে থাকে ফরমালডিহাইড, ফথালেটস এবং প্যারাবেন-এর মতো উপাদান, যা উত্তাপে বাষ্প হয়ে মাথার ত্বক বা শ্বাসনালীর মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এই ক্ষতিকর পদার্থগুলো শরীরে হরমোনের কার্যপ্রণালী ব্যাহত করে, কোষের ডিএনএ ক্ষতি করতে পারে, দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে শুধু ক্যানসার নয়, নিয়মিত হেয়ার স্ট্রেটনার ব্যবহারের আরও নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। যেমন চুল সোজা করার সময় উচ্চ তাপমাত্রার কারণে চুলের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা নষ্ট হয়। ফলে চুল ভেঙে যায় বা পড়তে শুরু করে, স্ক্যাল্পে জ্বালা, চুলকানি বা লালচে ভাব দেখা যায়, চুলের গঠন বদলে যায়, স্থায়ীভাবে পাতলা হয়ে যায়, চুলে উজ্জ্বলতা কমে যায় ও চুল ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এছাড়া রাসায়নিকের বাষ্পের কারণে অনেকের চোখ জ্বালা, মাথাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাও হয়।

কীভাবে ঝুঁকি কমাবেন? বিশেষজ্ঞদের মতে, হেয়ার স্ট্রেটনার একেবারে বাদ দেওয়া না গেলেও কিছু সতর্কতা মানলে ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। যেমন-
১. যতটা সম্ভব রাসায়নিকবিহীন বা ‘ফরমালডিহাইড-ফ্রি’ স্ট্রেটনার ব্যবহার করুন।
২. রোজ নয়, বিশেষ দিনেই হেয়ার স্ট্রেটনার ব্যবহার করুন।
৩. চুল স্ট্রেট করার আগে হিট প্রোটেক্ট্যান্ট সিরাম বা স্প্রে ব্যবহার করুন
৪. স্ট্রেটনারের তাপমাত্রা কম রাখুন এবং চুলে এক জায়গায় বারবার প্রয়োগ করবেন না
৫. ব্যবহারের সময় ঘরের জানালা খুলে রাখুন বা ফ্যান চালান, যাতে বাষ্প সরাসরি শ্বাসে প্রবেশ করতে না পারে।
৬. সপ্তাহে একদিন ডিপ কন্ডিশনিং বা অয়েল ট্রিটমেন্ট করে চুলের আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনুন
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন? যদি হেয়ার স্ট্রেটনার ব্যবহারের পর আপনি কয়েকটি লক্ষণ অনুভব করেন তাহলে সতর্ক হওয়া জরুরি। যেমন- চুল দ্রুত ঝরে যাচ্ছে, মাথার ত্বকে জ্বালা, পোড়া বা লালচে দাগ, অনিয়মিত ঋতুচক্র বা হরমোনজনিত পরিবর্তন। সেক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে সমস্যা ধরা পড়লে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
