ইউকে-র বাব্রাহাম ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা প্রমাণ করেছেন যে, মাত্র ১৩ দিনের আংশিক রি-প্রোগ্রামিং প্রক্রিয়া ব্যবহার করে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ত্বকের কোষের মলিকিউলার বা জৈবিক বয়স প্রায় ৩০ বছর পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব। এই প্রক্রিয়ায় তাঁরা ব্যবহার করেছেন বহুল আলোচিত ইয়ামানাকা ফ্যাক্টর, যা সাধারণত কোষকে তার প্রাথমিক অবস্থা অর্থাৎ স্টেম সেলের পর্যায়ে ফিরিয়ে নিতে সক্ষম।

তবে গবেষণার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল, এই রি-প্রোগ্রামিংয়ের পর কোষগুলো স্টেম সেলে রূপান্তরিত হয়নি। বরং তাদের নিজস্ব পরিচয় ধরে রেখেই কার্যকারিতায় তরুণ কোষের মতো আচরণ করতে শুরু করেছে।

কোষে যে পরিবর্তনগুলো দেখা গিয়েছে

গবেষণায় ব্যবহৃত প্রাপ্তবয়স্ক ফাইব্রোব্লাস্ট কোষগুলো আংশিক রি-প্রোগ্রামিংয়ের পর—
তরুণ কোষের মতো অধিক পরিমাণে কোলাজেন উৎপাদন করতে শুরু করে
ল্যাব-নির্মিত ক্ষত দ্রুত বন্ধ করার ক্ষমতা ফিরে পায়
জিন-অভিব্যক্তির ধরনে কমপক্ষে তিন দশক কম বয়সি কোষের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়
কিন্তু তারা তাদের মূল কোষ-পরিচয় হারায়নি

এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সম্পূর্ণ রি-প্রোগ্রামিং করলে কোষ স্টেম সেলে পরিণত হয়, যা অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রয়োগ করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। আংশিক রি-প্রোগ্রামিংয়ে সেই ঝুঁকি অনেক কম।

ভবিষ্যৎ চিকিৎসায় সম্ভাবনা

গবেষকেরা মনে করছেন, এই ফলাফল ভবিষ্যতের অ্যান্টি-এজিং চিকিৎসার দিকে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ত্বকের রোগ, ক্ষত নিরাময়, বয়সজনিত কোষ অবক্ষয়-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ হতে পারে।

তবে তাঁরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, এই প্রযুক্তি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, এবং মানবদেহে প্রয়োগের জন্য বিস্তৃত এবং দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা প্রয়োজন। নিরাপত্তা, কার্যকারিতা এবং দীর্ঘস্থায়িত্ব—সব কিছু যাচাই না হওয়া পর্যন্ত এটি চিকিৎসায় ব্যবহারের প্রশ্নই ওঠে না।

তবে যে কোনও ধরনের চিকিৎসা ছাড়াও ত্বকের যৌবন ধরে রাখা যেতে পারে। ত্বককে তরুণ এবং সুস্থ রাখতে নিয়মিত যত্ন এবং সঠিক জীবনযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত জল পান ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার যেমন ফল, শাকসবজি এবং বাদাম ত্বকের কোষকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্যের লক্ষণ কমাতে ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়, যা দাগছোপ এবং ত্বকের আগাম বার্ধক্য প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। হালকা ময়শ্চারাইজার, ভিটামিন সি এবং রেটিনলযুক্ত স্কিনকেয়ার ব্যবহার ত্বকের কলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে ত্বককে আরও টানটান এবং উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করতে পারে। সবশেষে মানসিক চাপ কমানো এবং ধূমপান-অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা ত্বকের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।